বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল এলাকায় মোটরসাইকেল ঢুকলেই গুনতে হচ্ছে টাকা

:
: ১ বছর আগে

#শেবাচিম হাসপাতাল এলাকায় মোটরসাইকেল ঢুকলেই গুনতে হচ্ছে টাকা
#রেখে দেওয়া হয় হেলমেট, পাংচার করে দেওয়া হয় চাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক::: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় মোটরসাইকেল প্রবেশ করলেই গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। কারণ জানতে চাইলে তা বেড়ে দাড়ায় এক হাজার টাকায়। দাবীকৃত টাকা না দিলে চাকা পাংচার করে দেওয়া, হেলেমেট রেখে দেওয়া এমনকি শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এমন অভিযোগ মোটরসাইকেল গ্যারেজ ইজারাদারের বিরুদ্ধে। মূলত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভাই গ্যারেজ ইজারা নেওয়ায় দিনের পর দিন এমন হয়রানি চালিয়ে আসছে।

এমন ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে শনিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হয়রাণির শিকার এক যুবক।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মজিরব রহমান গ্যারেজের ইজারা পাইয়ে দেন তার ভাই ইমনকে। ইমন আরো কয়েকজন লোক নিয়ে গ্যারেজ চালান। মূলত কাউন্সিলরের পরিচয় দিয়ে প্রতিদিন মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করেন তারা।

অভিযোগকারী মেহেদী হাসান জানান, শনিবার নিজের মোটরসাইকেলে দুই বছরের মেয়কে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের মাঝখানের গেট সংলগ্ন মাঠের পাশে মোটরসাইকেল ও হেলমেট রেখে বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে এসে হেলমেট পান না। পরে জরুরী বিভাগের গেটের কাছে গ্যারেজে খোঁজ নিলে প্রথমে দায়িত্বরতরা অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে হেলমেট ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ টাকা দাবী করেন। কারণ জানতে চাইলে গ্যারেজের লোকজন অশালীন ব্যবহার শুরু করেন এবং একহাজার টাকা দাবী করেন। অন্যথায় হেলমেট ফিরিয়ে দিবে না বলে জানান।

অভিযোগকারী আরো জানান, গ্যারেজের লোক পুরো হাসপাতালে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে যে গাড়িতে হেলমেট পায় সেখান থেকে নিয়ে এসে মানুষদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে। এটি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ একটি কাজ। হাসপাতালের নির্ধারিত গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে গাড়ি না রাখলে গ্যারেজ ফি দিতে হবে কি জন্য? মেহেদী হাসান বলেন, হাসপাতালে সকলেই জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য যায় সেখানে এমন জিম্মিকারী চক্র মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করলেও টাকা না পাওয়া পর্যন্ত হেলমেট ফিরিয়ে দিবে না বলে জানায় এবং সর্বশেষ ওরা হেলমেটটি রেখে দেয়।

হয়রাণির শিকার আরেক রোগী স্বপন বলেন, কয়েকদিন আগে আমার গাড়ি হাসপাতালের মধ্যে রেখে চিকিৎসা নিতে যাই। এসে দেখি গাড়ির চাকা পাংচার করে দেওয়া হয়েছে। একদিকে আমি অসুস্থ অন্যদিকে হাসপাতালের গ্যারেজের লোকজনের এই অমানবিক কাজ সত্যিকার অর্থেই আমাকে ভোগান্তিতে ফেলেছিল।

বরিশাল নগরীর সাগরদি এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ জানান, তিনদিন আগে আমার মা স্ট্রোক করেন। তাকে দ্রুত শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাতে পাঠাই। আমি নিজের মোটরসাইকেলে হাসপাতালে যাই। ডাক্তার মায়ের জন্য জরুরী ওষুধ আনতে দিলে দ্রুত আনার জন্য মোটরসাইকেল চালু করে দেখি গাড়ির দুটি চাকা পাংচার। পরে পাশের এক রিকশাচালক জানান, হাসপাতালের গ্যারেজের ইজারাদারের লোকজন এসে পাংচার করে দিয়ে গেছে।

হারুন অর রশিদ বলেন, গ্যারেজে গেলে সেখানের দুই যুবক আমার সাথে খুব বাজে ভাবে আচরণ করেন। তারা বলেন, হাসপাতাল এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকলেই ৩০ টাকা দিতে হবে। এই টাকা হাসপাতালের পরিচালক আদায় করতে বলেছেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, আমার ভাই গ্যারেজ ইজারা নিয়েছে। সেখানে মানুষকে হয়রানি করা তাদের উচিত না। যারা আসে তারা রোগ-শোক নিয়ে আসে এটিতো স্মরণ রাখতে হবে। গ্যারেজের স্টাফরা এসব কাজ করলে অবশ্যই গর্হিত কাজ।

সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, হাসপাতালের গ্যারেজে গাড়ি না রাখলেও তার টাকা দিতে হবে এমন নিয়ম যথারীতি অনিয়ম। সাধারণত হাসপাতাল কম্পাউন্ডের মধ্যের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। সেখানে ইজারা দিলেও তা আগত রোগী বা রোগীর স্বজনদের হয়রানি করতে পারেন না কেউ। আমি মনে করি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অব্যবস্থাপনার দায় এড়াতে পারেন না এবং হয়রানি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান রাখি।

ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, গ্যারেজ ইজারা দিয়েছি মোটরসাইকেলগুলো যেন শৃঙ্খলভাবে থাকে, কোন কিছু খোয়া না যায় সেসব পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে। যারা গ্যারেজে গাড়ি রাখবে তারা গ্যারেজ ফি দিবে। যারা রাখবে না তাদের কাছ থেকে বাধ্য করে টাকা রাখার মত অনিয়ম করতে গ্যারেজ ভাড়া দেইনি। আমি ইজারাদারকে আসতে বলেছি। সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানি করলে তার ইজারা বাতিল করা হবে। ##