হাজার শয্যার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি আছে প্রায় দ্বিগুণ রোগী। এর মধ্যে শীতকালীন বালাইয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে দিন দিন রোগী বাড়ছে।
আছে জনবল সংকট, চিকিৎসার মেশিনপত্র নিয়েও আছে ভোগান্তি। তাই চাইলেও সেবা দেওয়া সহজ হচ্ছে না।
শেবাচিমে সেবার মান ভালো, এটা প্রমাণিত। তাই হাসপাতালের আন্তঃবিভাগের অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে কিডনি ডায়ালাসইসিসেও। কিন্তু এ বিভাগের প্রয়োজনীয় মেশিনে সংযোগ দেওয়া নেই! যে কারণে প্রতিনিয়ত রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
রেচন তন্ত্রের রোগে আক্রান্তদের কিডনি সচল রাখতে শরীরে প্রবাহিত রক্তের বর্জ্যগুলো কৃত্রিম ছাঁকনির মাধ্যমে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াই হলো ডায়ালাইসিস। শেবাচিমে এ সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে মেশিন সংযোজন না হওয়ায়। হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, বর্তমানে পুরোনো ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নতুন দশটি ডায়ালাইসিসের মেশিন নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে থাকা মেশিনের বাক্স খোলা হয়নি। যে কারণেই সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, বেসরকারি ল্যাবে রোগীদের যেতে বাধ্য করতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মেশিনগুলো বাক্সবন্দি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার পায়তারা চালাচ্ছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগ সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রুমি জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া নতুন ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো সংযোগ দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সংযোগ হয়ে গেলে বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি রোগীকে সেবাদান সম্ভব হবে।
রোগীদের স্বজনরা জানান, বেসরকারি প্যাথলজি ল্যাবে একবার ডায়ালাইসিসে খরচ হয় কমপক্ষে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি এ হাসপাতালে ব্যয় হয় ৪০০ টাকা। সরকার ১০টি মেশিন বরাদ্দ দেওয়ার পরও গত একমাসে সেগুলো চালু হয়নি। এর পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্বিচারিতা রয়েছে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন। তবে সিন্ডিকেটের কারণে মেশিনগুলো এখনও পড়ে আছে বলে তারা দাবি করেন।
বাইরের ল্যাবে ডায়ালাইসিস করলে ঝুঁকি থাকে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ জনবল থাকায় ঝুঁকি কম। ব্যয়ও কম হয়। নতুন মেশিনগুলো কাজে লাগলে রোগীদের ভোগান্তি কমবে। এ জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
অভিযোগ থাকলেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলছেন স্থান সংকটের কথা। তিনি বলেন, পুরাতন ভবনে দশটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে। নতুন আরও ১০টি মেশিন জায়গা সংকটের কারণে চালু করা হয়নি। সেখানে এখন কিছু সংস্কার ও সংযোজনের কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনে ডায়ালাইসিস মেশিনের কার্যক্রম চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, শেবাচিমের পুরনো ডায়ালাইসিস মেশিনে গত তিন বছরে ১২ হাজার রোগী কিডনি ডায়ালাইসিসের সেবা নিয়েছেন।