শেবাচিমে চিকিৎসায় অবহেলা, লিফটে মারা গেলেন রোগী

:
: ২ years ago

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় মাহাবুব হাওলাদার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরে হাসপাতালের লিফটে ওই রোগীর মৃত্যু হয়।

মাহাবুব হাওলাদার ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলবকাঠি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি একজন চায়ের দোকানি। কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত সোমবার (১২ ডিসেম্বর) তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।

 

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে ন্যূনতম সেবা পাচ্ছে না গুরুতর অসুস্থ রোগীরা। অযত্ন-অবহেলায় রোগী দেখা হয়। এছাড়া নার্সদের কাছে গেলে তারা খারাপ আচরণ করেন।

মাহাবুব হাওলাদারের ভাই সমুন হাওলাদার বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমি ছিলাম। ওখানে রোগ একটা নিয়ে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয় অন্যটার। আমার ভাইকে ভর্তি করার পর প্রথমে জানালো শুধু কিডনিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এরপর তাকে হৃদরোগ বিভাগে পাঠানো হলো। আমার ভাই যদি হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাকে প্রথমেই ভর্তি করা উচিত ছিল হৃদরোগ বিভাগে, মেডিসিন বিভাগে না।

মাহাবুব হাওলাদারের বোন শাহনাজ বেগম বলেন, আমার ভাই যখন বেশি অসুস্থ, তখন ডাক্তারদের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছি। তারা কোনো কথাই শোনেননি। নার্সদের কাছে গেলে তারা ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পরপর দুটি ইনজেকশন দেওয়ার পরই রাত আড়াইটার দিকে মাহাবুব পাগলের মতো হয়ে যায়। শুধু বলে বুকে ব্যথা। তখন এত করে অনুরোধ করেছি আমাদের হৃদরোগ বিভাগে পাঠানোর জন্য, কিন্তু ডাক্তার-নার্স সবাই ঘুমাতে চলে যায়। কেউ আমাদের কথা শোনেননি। আমার ভাই নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর নার্স এসে বলে দ্রুত হৃদরোগ বিভাগে নিয়ে যেতে। যখন হৃদরোগ বিভাগে নিচ্ছিলাম তখন লিফটেই তার মৃত্যু হয়।

 

তিনি আরও বলেন, আমার মৃত ভাইকে নিয়ে ২০ মিনিট ঘুরেছি হৃদরোগ বিভাগে। লাশ ভর্তি করে এই টেস্ট সেই টেস্ট করতে বলে। তারপর জানায় আমার ভাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মাহাবুব হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে সেই বিভাগে ভর্তি করার কথা। অথচ আমাদের মেডিসিনে ভর্তি রেখে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়েছে।

মাহাবুব হাওলাদারের বাবা বজলুর রহমান বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাব বলে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার ডাক্তার-নার্স চিকিৎসায় অবহেলা করে আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে। তার তিনটি ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। তারা এতিম হয়ে গেল।

মাহাবুবের স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, সম্পূর্ণ ভুল চিকিৎসায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। আমার স্বামী সুচিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে যেতেন। কিন্তু ওখানকার ডাক্তার-নার্সরা গরিব রোগীদের রোগী হিসেবেই মনে করেন না।

কুলবকাঠি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়নাল হাওলাদার বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো রোগের সুচিকিৎসা পাওয়া যায় না। চিকিৎসা না পেয়ে মাহবুবের মৃত্যু হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- যেন এই হাসপাতালটি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আন্তরিক করা হয়।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন কোনো অভিযোগ এখনো আমি পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।