শিলার আত্মহত্যার ৩ মাসেও গ্রেফতার হয়নি দুই বখাটে

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago
শিলা

শিলা হত্যার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দোষী দুই বখাটেকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বলছে দুই বখাটে জাফর ও খোকনকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শিলার পরিবারের দাবি, বখাটেরা প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে এলাকায় ঘুরাফেরা করছে। অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

এদিকে, বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় একটি মহল শিলার পরিবারকে চাপ দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন শিলার মা শাহানাজ বেগম। ফলে চাপা ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে দিন অতিবাহিত করছে শিলার পরিবার।

আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপি’র পশ্চিম কলেশ্বরী এলাকায় শিলাদের বাড়ি। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, শিলার স্মৃতি বাড়িময় ছড়ানো। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার উপহার, বইপত্র, কাপড়-চোপড়, তার নিজের হাতে তৈরি করা বিভিন্ন প্রকার হস্তশিল্প সবকিছুই রয়েছে আগের জায়গায়। শুধু শিলা নেই। শিলার মা-বাবা এখন শুধু মেয়ের স্মৃতি নিয়ে বসে থাকে আর নীরবে কাঁদেন।

শিলার মা  শাহনাজ বেগম  বলেন, শিলা যাদের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল তারা আজ এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। ৩ মাস পার হতে চলল কিন্তু আমরা কোন বিচার দেখতে পাচ্ছিনা। আমরা বিচার পাবো কি-না তাও জানি না। এরই মধ্যে আবার স্থানীয় মেম্বার দিয়ে বিষয়টি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে আমরা মীমাংসা করে নিই।

শিলার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও জানান, আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল সে একজন পুলিশ অফিসার হবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সে তা হতে পারলো না। বখাটেদের কারণে সে নিজেকে শেষ করে দিল। মেয়ে চলে গেছে কিন্তু দোষীদের কোনো কিছু হচ্ছে না। বখাটেরা আমার কোল খালি করছে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে এরা থামবে?

শিলার মামা মো. আসলাম হোসেন বলেন, ঘটনার তিনদিন পর ১৩ অক্টোবর থানায় মামলা হয়। এখনো আসামীদের ধরা হচ্ছে না। কেন ধরা হচ্ছে না সেটা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানেন। তবে আমাদের দাবি তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। যাতে আর কোন বখাটে এরকম কারও জীবন নষ্ট করতে না পারে।

গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে শিলা। মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট লিখে জানিয়ে যায়, এ আত্মহত্যার জন্যর দায়ী কারা। পরে এঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। ১৩ অক্টোবর শিলার লিখে যাওয়া চিরকুটের উপর ভিত্তি করে তার বাবা আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে জাফর ও খোকনকে আসামী করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা (নং-২৩) করেন। শিলা আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া চিরকুটে উল্লেখ ‘যা করিনি তার জন্য কেন দোষী হতে হবে, তার থেকে মরে যাওয়া ভাল। আমার জন্য আমার মা-বাবার সম্মানহানি হোক সেটা আমি চাই না। আমার মৃত্যুর জন্য জাফর-খোকন দায়ী। ইতি হতভাগী শিলা।’

শিলা শিমুলিয়া এসপি হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সাভার উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুনাহার  বলেন, এ নিয়ে এলাকার নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, উড়ছে টাকা। একটি প্রভাবশালী চক্র বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে করছে নানা ফন্দিফিকির। আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। কেউ যাতে কোনো শিক্ষার্থীকে বিরক্ত না করতে পারে সেই জন্য পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের ডিবি অফিসার ইনচার্জ এফ এম সাইদ বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা, মিরপুর ও কেরানীগঞ্জে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে খুব শীঘ্র তারা ধরা পড়বে বলেও জানান ওসি।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান বলেন, শিলা হত্যার ঘটনায় জাফর সাদিক ও খোকন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। হত্যাকারী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে সব জায়গায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।