শিলাবৃষ্টির পর ঢেউটিনের বাজারে আগুন

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর উপজেলায় আকস্মিক শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে ঘরের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে যাওয়ার দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

বৃষ্টির পর শহরের টিনের দোকানগুলোতে দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এ সুযোগে ঢেউটিনের দাম বান্ডিলপ্রতি চার থেকে ছয়শ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতা।

স্থানীয়রা জানান, নাগেশ্বরী পৌরসভা এলাকা, রামখানা, রায়গঞ্জ, নেওয়াশী, সেনপাড়া, বামনডাঙ্গা, গাগলা ও কালিগঞ্জে ঝড়ো হাওয়ার সাথে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় সহস্রাধিক ঘর-বাড়ির টিনের চাল শিলার আঘাতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও দমকা বাতাসে অনেকের বাড়ির চাল উড়ে গেছে।

পৌর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান,  শিলাবৃষ্টিতে তার ঘরের চালসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নেওয়াশী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় তার ইউনিয়নের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে চলতি বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগাম চাষ করা ধানের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও ঝড়ো হাওয়ায় স্থানীয় সুপারি বাগানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, শুক্রবার সকাল থেকে একযোগে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। দুই দফায় এ বৃষ্টিতে নানাস্থানে বিদ্যুতের খুটি হেলে পড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

পৌর এলাকার বল্লভপুর এলাকার কৃষক আনিচুর রহমান জানান, তার দুই একর আঠাশ ধানের আবাদের শীষ আসার সময় হয়েছে। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে ধানের থোর নষ্ট হয়ে গেছে।

বেরুবাড়ী মীরেরভিটা এলাকার কৃষক হাসমত আলী বলেন, তার এক একর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

পূর্বসুথাতি মাঠেরপাড় এলাকার মফিজুল ইসলাম জানান, তার তিনটি ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে শিলার আঘাতে।

উপজেলা সদরের বিএসসিমোড়ের একটি শতবর্ষী গাছের ডাল ভেঙে তিনিটি দোকান ভেঙে গেছে। এসময় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন দোকানদাররা।

অন্যদিকে ঘরের চালের টিন নষ্ট হওয়ায় সেগুলো মেরামতে শহরের ঢেউটিনের দোকানে ভিড় করছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। এ সুযোগে বিক্রেতারা টিনের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন।

শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার আবু হোসেন মিন্টু বলেন, এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িরই টিনের চাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সবাই একযোগে টিন কিনতে এসেছেন। এ সুযোগে ক্রেতারাও বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন।

ঢেউটিন কিনতে আসা আতা নামে এক ক্রেতা বলেন, ঢেউটিন কিনতে এসে মাথা ঘুরছে। এতো বেশি দাম চাইলে টিন কিনব কিভাবে!

ব্যবসায়ীরা জানান, ঝড়ের পর টিনের জোগানের তুলনায় চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন।

উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল ওয়ালিদ মাসুম বলেন, আমার ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আগাম বোরো ধান, সুপারি বাগান ও মৌসুমি সবজিসহ মানুষের ঘরের চালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জানান, শিলাবৃষ্টি হলেও বোরো আবাদের তেমন ক্ষতি হবে না। শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান গাছের পাতার কিছুটা ক্ষতি হলেও ফসলে এর কোন প্রভাব পড়বে না।