#

নরসিংদীর শিবপুরে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে কলেজ গেইট বাজার থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে। সময় মতো আদেশ বাস্তবায়ন না করায় ইউএনও’র কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে জেলা প্রশাসন।
একই সঙ্গে কেন আদালত অবমাননার মামলা করা হবে না এই মর্মে ইউএনও হুমায়ন কবিরকে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে টেন্ডারের শর্ত ভঙ্গ করে কলেজ গেইট বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ আদায় করায় সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে ঠিকাদারকে। তাই আগামী ৬ মাস বাজার থেকে অর্থ আদায়সহ সম্প্রতি দরপত্র আহ্বানের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে যথাসময়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

আদালতে করা রিট সূত্রে জানা যায়, শিবপুর উপজেলার কলেজ গেইট হাট বাজারের ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করেন উপজেলা প্রশাসন। সেই অনুযায়ী চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নেয়। টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন মো. মাহাবুবুর রহমান রিকাবদার। তিনি ১৭ লাখ ১১ হাজার টাকা ডাক তোলেন। ১৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় ২য় ডাক তুলে ২য় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন শেখ কামাল হোসেন। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ দরদাতা মো. মাহাবুবুর রহমান রিকাবদারকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দরপত্রে উল্লেখিত দরের ৭৫ শতাংশ ইজারার অর্থ, মোট দাখিলকৃত দরের ওপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আয়কর, ৫ শতাংশ জামানত এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট জমা দেয়ার কথা বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৭ মার্চের মধ্যে উল্লেখিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জমা দেয়ার কথা।

কিন্তু টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদার ১৩ই মার্চ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা দেন। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে অর্থ জমা না দেয়ায় হাটবাজার ইজারা আইনের ৩ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। সরকারিবিধি অনুযায়ী বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সকল শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে দরপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।

এদিকে সরকারি শর্ত ভঙ্গ করে বাজার থেকে ইজারার অর্থ উত্তোলন করছেন মো. মাহাবুবুর রহমান রিকাবদার। অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের অনৈতিক কাজে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছেন ইউএনও। তাই ২য় সর্বোচ্চ ডাকদাতা টেন্ডার বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে সুফল না পাওয়ায় শেখ কামাল হোসেন হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত আগামী ৬ মাস বাজার থেকে অর্থ আদায়সহ সম্প্রতি দরপত্র আহ্বানের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেদাজ্ঞা দেন। কিন্তু আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো:. হুমায়ন কবিরের নিকট লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে কেন আদালত অবমাননার মামলা করা হবে না এই মর্মে ইউএনও হুমায়ন কবিরকে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়।

আদালতে রিটকারী শেখ কামাল হোসেন বলেন, টেন্ডারে হাট-বাজার আইনের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে। অথবা ২য় সবোর্চ্চ ডাকদাতাকে কার্যাদেশ দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ইউএনও পরোক্ষভাবে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে মাহাবুবুর রহমানকে অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনে সহায়তা করছেন। আমাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই আমি আদালতের দারস্থ হয়েছি।

টেন্ডারের নিয়ম ভঙ্গ করে অর্থ আদায় প্রসঙ্গে ঠিকাদার মো. মাহাবুবুর রহমান রিকাবদার বলেন, শুক্রবার থেকে ইজারা তোলা বন্ধ করা হয়েছে। স্থগিতাদেশের পর ইউএনও অফিস থেকে একটি লিখিত জবাবও দেয়া হয়েছে। তারপরও পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পযর্ন্ত আমাদের পক্ষ থেকে ইজারা তোলা বন্ধ থাকবে।

শিবপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির বলেন, ২৮ তারিখ চিঠি ইস্যু করলেও ইজারাদার ৫ই মার্চ চিঠি পেয়েছেন। চিঠি পাওয়ার পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে টাকা জমা দিতে হবে। সে হিসেবে কোনো ব্যাত্যয় ঘটেনি। তবে পূর্বে বাজারের ডাক ছিল ১০ লাখ টাকা। এবার ডাক উঠেছে ১৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। তাই নিয়ম অনুসারে সবোর্চ্চ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ১৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকার ডাক তোলেন। এখন আমি সবোর্চ্চ দরদাতাকে বাদ দিয়ে ২য় দরদাতাকে ইজারা দিতে পারি না। সেটার জন্যই উনি একটু সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাই আদালতে গিয়েছেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাজারের ইজারা তোলা স্থগিত রাখা হয়েছে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন