শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে জাবি শিক্ষকের অব্যাহতি

লেখক:
প্রকাশ: ১ মাস আগে

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সরকার নৃশংস হামলা করেছে দাবি করে এর প্রতিবাদে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম। তিনি জাবির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক বলে জানা গেছে।

 

 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর প্রেরিত পত্রে স্বেচ্ছায় অব্যাহতির ঘোষণা দেন তিনি। পত্রটি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম।

উপাচার্য বরাবর পাঠানো পত্রে জাহিদুল করিম বলেন, বিগত প্রায় ১৪ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছি। দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে অনেক ব্যাথিত করেছে। আমি সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছি এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বদা পাশে থেকেছি।

 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে। সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারতো। তাহলে এতো প্রাণ হানির ঘটনা ঘটতোনা। যে সব শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, তাদের নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা।

জাহিদুল বলেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা এই জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং কিছু সংখ্যক প্রতিবাদী শিক্ষকদের রক্তাক্ত করার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই হত্যাকান্ড দেখেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের আমি নির্লিপ্ত থাকতে দেখেছি। শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলীয় করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভুলুণ্ঠিত হয়েছে।

 

এতে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব শহিদ শিক্ষার্থী এবং আহত শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রকাশ করছি এবং তাদের জন্য দোয়া করছি। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে আমি সহযোগী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যহতি ঘোষণা করছি।

অব্যাহতির বিষয়ে অধ্যাপক জাহিদুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, আমি আবেদনপত্র পেয়েছি। সেটি এখনও গ্রহণ করিনি। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ফাইল এলে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জাহিদুল করিমের নামে একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে।