শামসুন্নাহার স্মৃতি থেকে পরীমনি

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

পিরোজপুরের মেয়ে পরীমনি। সার্টিফিকেট নেম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ২০১৫ সালে ‘রানা প্লাজা’ সিনেমায় প্রথম চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু নানা জটিলতায় থমকে যায় এই সিনেমার মুক্তি। তবে একই বছর ‘ভলোবাসা সীমাহীন’ সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। তবে অভিনয় দক্ষতার চেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। জানা যায়, চলচ্চিত্রে আসার আগেই ইসমাইল নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন পরীমনি। দুই বছরের মাথায় ভেঙে যায় সেই সম্পর্ক।

চলচ্চিত্রে অভিষেক বছরেই এই অভিনেত্রী মোট ১২টি সিনেমায় কাজ করেন। এর মধ্যে ৬টি সিনেমা মুক্তি পায়। উল্লেখ্য এর মধ্যে কোনো সিনেমাতেই তিনি দর্শক হৃদয়ে দাগ কাটতে পারেননি। তবে এরপর বিখ্যাত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ মুক্তি পেলে পরীমনি আলোচিত তারকায় পরিণত হন। ‘অন্তর জ্বালা’ মুক্তি পেলে পরীমনির অভিনয় প্রশংসিত হয়। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনের কারণে অধিক আলোচনায় উঠে আসেন এই নায়িকা।

ক্যামেরার বাইরে তার জীবনযাপন নিয়ে তৈরি হয় ভক্তদের কৌতূহল। বিষয়টি পরীমনি উপভোগ করতেন এমন সাক্ষ্য তার অনেক ঘটনাতেই মেলে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে তিনি যখন এফডিসিতে তিনটি গরু কোরবানি দেন তখন বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। এরপর পরীমনি ঘোষণা দেন তিনি যতদিন বাঁচবেন এফডিসিতে গরু কোরবানি দেবেন এবং প্রতিবার একটি করে গরুর সংখ্যা বাড়বে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ঈদুল আজহায় ৬টি পশু কোরবানি দেন তিনি। বনানীতে বাড়ি ও কোটি টাকা দামের ৩-৪টি গাড়ি বদল করেন। প্রায় সময়ই তাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দুবাইয়ে ঘুরতে যেতে দেখা যায়। ফলে প্রশ্ন ওঠে তার উপার্জনের উৎস কী?

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে এক সাংবাদিকের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন করেন পরীমনি। পরের বছর ভালোবাসা দিবসে বিয়ে করার কথা থাকলেও ভেঙে যায়। ২০২০ সালে ৩ টাকা কাবিনে পরীমনি বিয়ে করেন নির্মাতা কামরুজ্জামান রনিকে। একই বছর তাদের বিচ্ছেদ হয়। সর্বশেষ বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পরীমনি। এ নিয়ে গত ১৩ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিলে তোলপাড় শুরু হয়। তারপর পরীমনির বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ তোলে অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেড। এসব বিষয় নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। রূপালি পর্দায় পারফরমেন্সের চেয়ে বাস্তব জীবনের ‘কাাহিনী’ নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন পরীমনি।

চলচ্চিত্রাঙ্গনেও পরীমনিকে নিয়ে নানান রকম সমালোচনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তার কয়েকজন ধনাঢ্য বন্ধু রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে দামি গাড়ি-বাড়ি উপহার পেয়েছেন। গুলশান, উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে যাতায়াত রয়েছে তার। অর্থাৎ তাকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই তিনি একেবারেই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষ। যদিও তারকাখ্যাতি তার রয়েছে। এই খ্যাতি ধরে রাখতে বেশ তৎপর তিনি। যদিও তার অভিনীত সিনেমা তেমন হিট হয়নি, হাতেও নেই তেমন কোনো সিনেমার কাজ। আয়েরও নির্দিষ্ট কোনো উৎস নেই। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার (৪ আগস্ট) পরীমনির বনানীর বাসায় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমান মদ ও মাদক দ্রব্য। আটক করা হয়েছে তাকে। অপরাধ জগতের চক্রের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্ঠতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিনেমায় পাওয়া সামান্য জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতির মোহের কাছেই নিজেকে খুঁইয়ে ফেলেছেন এই নায়িকা।
শামসুন্নাহার স্মৃতি থেকে পরীমনি; নামটা বাহারি কিন্তু কর্মে নিজেকে সাজাতে পারলেন কই? পরীমনির জীবন চিত্রনাট্যে এখন মাদক, রিমান্ড, জেল হাজতসহ নানামুখী আলোচনা। সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তব জীবনে আপাতত পুরোদুস্তর ‘খলনায়িকা’ পরীমনি!