লোভ দেখিয়ে নারীদের নিঃস্ব করেন তারা

:
: ৬ years ago

সিএনজি অটোরিকশার তিন আসনে বসেন তিনজন। একটি আসন রাখেন খালি। পথে কোন বিত্তশালী নারী পথচারী পেলেই তুলে নেন অটোরিকশায়। এরপর কৌশলে সহযাত্রী নারীকে সোনার বারের লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নেন অর্থ ও মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার।

দীর্ঘদিন ধরে প্রতারকদের পাতানো ফাঁদে এভাবে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে আসছেন নারীরা। শনিবার বিকালে নগরের সদরঘাট থানার মোগলটুলী এলাকার বার কোয়ার্টার জাহাঙ্গীর মার্কেটের সামনে থেকে এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রতারণার এ চিত্র উঠে আসে।

প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা চারটি নকল সোনারবারসহ, দুই জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একটি করে নাকফুল ও আংটি জব্দ করেছে পুলিশ। গ্রেফতার তিনজন হলেন- পটুয়াখালীর বাসিন্দা মো. টিটু, কিশোরগঞ্জের মো. দেওয়ান ও বরগুনার মো. আফজাল হোসেন।

সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দীন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা একেকজন একাধিকবার এ ধরণের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সহজ-সরল নারীদের নিঃস্ব করার কথা স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে তাদের সহজ শিকারে পরিণত হন প্রবাসীর স্ত্রীরা। প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, প্রতারক চক্রটি প্রতারণার জন্য বেছে নেয় নগরের নির্জন ও উপশহর এলাকাগুলো। এসব এলাকায় গ্রামের বিত্তবান ও প্রবাসীর পরিবারগুলো বাস করে। সিএনজি অটোরিকশা করে এসব এলাকায় ঘুরেন তারা। অটোরিকশার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে একজন নারীসহ চারজন বসেন। একটি আসন খালি রেখে চক্কর দিতে থাকে। পথে গয়না পরিহিতা কোন নারী পথচারী পেলে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নেন। একজনের হাতে থাকে নকল স্বর্ণের বারের থলে। সে কৌশলে নির্জন এলাকায় থলেটি ফেলে দেন। চোখের ইশারায় বিষয়টি অপর সহযোগিকে জানিয়ে দেয়। কিছু দূর যেতেই রাস্তায় থলে পড়ে থাকতে দেখেছে বলে গাড়ি থামান আরেক সহযোগী। রাস্তা থেকে থলেটি কুড়িয়ে নেন। থলে খুলে বের করে আনেন নকল স্বর্ণের বার। সঙ্গে থাকে কোন জুয়েলারির দোকানির উদ্দেশ্য চিঠি। চিঠিতে থাকে বারগুলো ভেঙে গয়না গড়ে দেওয়ার অনুরোধ। যাতে মনে হয় স্বর্ণের বারগুলো কারো হাত থেকে পড়ে গেছে। কথার মধ্যেই সহযোগিদের একজন আসল সোনা বলে শনাক্ত করেন। এরমধ্যে একজন স্বর্ণগুলো কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সহযাত্রী নারীটিকেও উদ্বুদ্ধ করেন বারগুলো কিনে নিতে। বাজারের প্রচলিত দামের চেয়ে অনেক কম দাম হাঁকা হয়। এতে লোভে পড়ে যান পথ থেকে তুলে নেওয়া সহযাত্রী নারীটি।

ফাঁদে পড়ে নকল সোনার বিনিময়ে কখনো টাকা কখনো গায়ে থাকা গয়না তুলে দেন প্রতারক চক্রের হাতে। টাকা কিংবা গয়না হাতে পেয়েই চম্পট দেয় প্রতারক চক্র। নকল স্বর্ণ যখন টের পান তখন আর কিছুই করার থাকে না। এভাবে নগরের বিভিন্ন এলাকার রিকশা যাত্রী নারীরাও প্রতারিত হন।

সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমীন বলেন, রমজানকে টার্গেট করে চট্টগ্রামে আসে প্রতারক চক্রটি। কদমতলী এলাকার দোকান থেকে পিতল কিনে নিয়ে তা শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে স্বর্ণের মতো চকচকে করে তোলে। এরপর রিকশা চালকদের তাদের দলে ভিড়িয়ে স্বর্ণের বারগুলো তাদের হাতে দেয়। কোন নারী যাত্রী পেলে রিকশা চালকরা স্বর্ণের থলেটি পেয়েছে জানিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করে। অথবা আসল স্বর্ণের কানের দুল ও আংটি এসবের বিনিময়ে নকল স্বর্ণের বারগুলো দিয়ে প্রতারণা করে চম্পট দেয়।