ভারতে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে সাত ধাপে ১৯ মে পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে মুসলিম অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট আসন থেকে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এই আসনকে সাম্প্রদায়িকভাবে বেশ সংবেদনশীল মনে করা হয়।
এমন একটি আসনে মুসলিম অভিনেত্রীকে প্রার্থী করায় আলোচনা বেশ জমে উঠেছে। এখন ভোটের লড়াইয়ে এই আলোচনা কতটুকুন অটুট থাকে সেটাই দেখার বিষয়। তৃণমূল কংগ্রেস এবার ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে যেখানে ৫জন নুসরাতের মতো সিনেমা জগতের মানুষ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এত জন প্রার্থী কেন সিনেমা জগতের থেকেই বেছে নেয়া হলো? যার মধ্যে চারজনই আবার মহিলা? তিনি বলেন, ‘কেন নয়? যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।’
নুসরাত জাহান আগেই বলেছেন, ‘একজন মহিলা পারবেন না, এমন কাজ হয় না। আজকের দিনে নারী ক্ষমতায়ন অনেক বেড়েছে। তারা নিজেদের পেশাগত দিক এর সাথে সাথে মানব সভ্যতারও যত্ন নিতে পারেন।’
তবে তৃণমূলের বিরোধীরা বলছেন এটা আসলে ‘রাজনৈতিক চাল’। যে কোনও রূপোলি পর্দার সাথে যুক্ত মানুষই চট করে অনেক বেশি মানুষের ভোট টেনে নিতে পারেন। তা ছাড়া প্রত্যেকটা দলের মধ্যে নানা অন্তর্দ্বন্দ্ব চলে কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু কোনও অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত ব্যক্তি যদি নির্বাচনে সাফল্য নাও পান তা হলে তাকে ‘ঝেড়ে’ ফেলা যায়। আর যদি তিনি সফল হন তা হলে সেটা দলের মুকুটে অতিরিক্ত পালক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তৃণমূলের সংসদ সদস্য সৌগত রায় বলেন, ‘যাঁরা বক্স অফিসে সফল তাদের প্রতি ভোটারদের সব সময় একটা অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকে। আগেও দেখা গিয়েছে সিনেমার সাথে যুক্তদের মমতা ব্যানার্জি প্রার্থী করেছেন। এবারও সেই ফর্মুলাই আবার প্রয়োগ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সঠিকভাবে না জানলেও শুনছি, বিজেপি বিনোদ খান্না, শত্রুঘ্ন সিনহা, হেমা মালিনী, ধর্মেন্দ্রকে প্রার্থী করতে চলেছে। কংগ্রেস হয়তো নাগমাকে রাখবে। বেশ কিছু আঞ্চলিক দল সিনেমার তারকাদের উপরে পাখির চোখ করে রয়েছে।’
কিন্তু এ ভাবে চলতে থাকলে যারা দলের নিয়মিত সদস্য তাদের মনোবলে ভাঙ্গন ধরবে না? সৌগতবাবু বলেন, ‘আমার কাছে অন্তত এমন কোনো অভিযোগ আসেনি।’
কংগ্রেসের ঋজু ঘোষাল বলেন,‘তারকাখচিত হওয়াটা বিষয় নয়, প্রশ্নটা হল যিনি জিতবেন তিনি মানুষের প্রতিনিধি হবেন। তাই মানুষকে আপনি কি ফিরিয়ে দিতে পারছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর রাজনীতি একটা যথেষ্ট সিরিয়াস বিষয়।’
তবে ২০১৪ সালে এই ‘স্ট্র্যাটেজি’ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেই গিয়েছিল। অভিনেতা দেব ঘাটাল থেকে, মুনমুন সেন বাঁকুড়া থেকে জিতে গিয়েছিলেন। দু’টিই ছিল গ্রামীণ আসন। আপাতত মুনমুন সেনকে বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে আসানসোল থেকে দাঁড় করানো হয়েছে।
তবে ২০১৪ সালে সিপিএমের আইনজীবী বাসুদেব আচার্যকে বেশ বড় ব্যবধানে হারিয়েছিলেন মুনমুন সেন।
কিন্তু সব শেষেও প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে। বাস্তব রাজনীতি নাকি তারকাদের গ্ল্যামার! তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এই সুযোগের বেশিটাকেই জেতার ফর্মুলায় কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখা যাক বক্স-অফিসের সাফল্য অর্জন কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে ভোটের ব্যালট বক্সে।
১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি জন্ম নেয়া নুসরাত কলকাতার ভবানীপুর কলেজ থেকে বিকম পাশ করেছেন। ২০১০ সালে সুন্দরী প্রতিযোগীতা ফেয়ার ওয়ান মিস কলকাতা নির্বাচিত হয়ে শোবিজ অঙ্গনে যুক্ত হন তিনি। এরপর কিছুদিন মডেলিং সেখান থেকে টলিউড ছবিতে। তার প্রথম ছবির নাম ‘শত্রু’ যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন জিৎ। এই ছবি মুক্তিরপর এক বছর বিরতি দিয়ে তিনি শুরু করেন দ্বিতীয় ছবি। নাম ‘খোকা ৪২০’। যেখানে নায়ক ছিলেন দেব। এরপর এক এক করে মুক্তি পেতে থাকে তার খিলাড়ি, যোদ্ধা, সন্ধ্যা নামার আগে, জামাই ৪২০ সহ বেশ কিছু সুপার হিট ছবি।
২০১৮ সালে তিনি নাকাব নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান।