মানবদেহের দুটি বিশেষ গুরুত্বপূূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার ও ফুসফুস। এ দুটি অঙ্গে ভয়ানক ও জটিল ব্যাধি যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তখন শারীরিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
ফুসফুসের ও লিভারে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সাধারণত সার্জারী তার মূল চিকিৎসা পদ্ধতি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত খুব এ্যাডভান্স স্টেইজ-এ শনাক্ত হয়ে থাকে। যার ফলে সার্জারী করা সম্ভব হয় না। এ জন্য লিভার দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক মাইল ফলক স্থাপন করেছে।
লিভার ও ফুসফুস টিউমার ও ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা সমূহ হলো-
মাইক্রোওয়েভ কী : লিভার ও ফুসফুস ক্যান্সার টিউমারে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম ও এর সফল চিকিৎসা হলো মাইক্রোওয়েভ। এটা হলো হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রিসিটিকে লো-ভোল্টেজে বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে ক্যান্সার টিউমারের মধ্যে প্রবাহিত করে সম্পূর্ণরূপে, ক্যান্সার টিউমারের মধ্যে ক্যান্সার সেলকে সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে ফেলার পদ্ধতি হলো মাইক্রোওয়েভ। এটা অত্যন্ত সফল ও উন্নত বিশ্বের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা লিভার ও ফুসফুস টিউমার ও ক্যান্সারে প্রয়োগ করা হয়। যাদের হেপাটাইটিস বি. সি. লিভার সিরোসিস ও প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে তাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ও সফল পদ্ধতি মাইক্রোওয়েভ। এই মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে ১২ সে.মি পর্যন্ত লিভার টিউমারকে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ফেলে ক্যান্সার সেলকে অকার্যকর করা যায়।
মাইক্রোওয়েভ এমনই একটি আধুনিক পদ্ধতি যা প্রয়োগের জন্য রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়ে না এবং রোগীকে হাসপাতালে মাত্র ১ দিন থাকতে হয়।
টেইস: ট্রান্স আরট্যারিয়াল কেমো এম্বোলাইজেশান। টেইস এমনই একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা উন্নত বিশ্বে ব্যাপক হারে প্রচলিত ও সমাদৃত। এর দ্বারা লিভার ও ফুসফুস টিউমার ও লিভার ও ফুসফুস কান্সারের চারপাশে কেমো থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে যে কোনো ধরনের বড় লিভার ও ফুসফুস কান্সার টিউমারকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত। এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগী অল্প সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে এর চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত কম।
মাইক্রোওয়েভ ও টেইস : উন্নত বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত উভয় চিকিৎসা পদ্ধতি যথেষ্ট সমাদৃত। কোনো ক্ষেত্রে লিভার ও ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের আগে মাইক্রোওয়েভ তার ২/৩ সপ্তাহ পরে টেইস পদ্ধতি করা হয়ে থাকে। এটাকে সাধারণত সমন্বয় চিকিৎসা বলা হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগে টেইস পরে মাইক্রোওয়েভ প্রয়োগ করা হয়।
এই চিকিৎসাসমূহ ছাড়াও লিভার ও ফুসফুস ক্যান্সারে বর্তমান প্রচলিত চিকিৎসা কেমো থেরাপি রেডিও থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। যাতে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে যেতে থাকে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে রোগী তার স্বাভাবিক জীবনে খুব দ্রুত ফিরে যায়। যা বর্তমান চিকিৎসায় প্রচলিত পদ্ধতি থেকে অত্যন্ত কার্যকর।
লিভার ও ফুসফুস কান্সার ও টিউমারে আরও বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব। যেমন- নরমাল লিভার এম্বোলাইজেশন, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এ্যাবলেশন। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের ফলে রোগী নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও ওষুধ সেবনে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
লেখক : ডা. মুস্তাক আহম্মেদ জালালী
সহযোগী অধ্যাপক
রেডিওলজি ও ইমেজিং
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
মহাখালী, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭৫৪-৩৭০৮৩১