কুষ্টিয়ার খোকসা ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনীর আত্মহননের জন্য দায়ী ধর্ষক শাহীনের বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত মামলা নিতে বাধ্য হয় খোকসা থানার পুলিশ।
খোকসা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমান জানান, আত্মহত্যা করার আগে রেখে যাওয়া ওই ছাত্রীর সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে আত্মহত্যা প্ররোচণার অভিযোগে অভিযুক্ত শাহীনের বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৫। আত্মহননের শিকার তরনীর বাবা আজমল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শাহীন পলাতক রয়েছে।
প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান শাখার মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনী অসুস্থ আপন খালাকে দেখতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শহরে যাওয়ার জন্য মামার শ্বশুর শাহীনের মোটরসাইকেলে রওনা হয়। কিছ দূর যাওয়ার পর লম্পট শাহীন নতুন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে তাকে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে য়ায় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে ধর্ষক নিজে ছাত্রীটিকে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে যায়। ওই রাতেই ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী তার মা রেশমী পারভীন বন্যাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে তার মা বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। ক্ষোভ, লজ্জা ও ঘৃণায় পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে সুমাইয়া তরনী আত্মহত্যা করে।
ওই সময় তার মৃত্যুর কারণ অন্ধকারে ঢেকে যায়। অবশেষে ৫ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে টেবিলে রাখা তার একটি খাতার পাতা উল্টাতেই আত্মহত্যার আগে লেখা সুইসাইড নোট পওয়া যায়। ওই নোটে লেখা ছিল আপন মামার শ্বশুর শাহীন তাকে ধর্ষণ করে। ওই সুইসাইড নোটে নরপশু শাহীনের বিচারও দাবি করে গেছে ওই ছাত্রী। ঘটনার পর থেকে শাহীন গা ঢাকা দিয়েছে। শাহীন কমলাপুর গ্রামের মকবুল হোসেন মজনুর ছেলে। তিনি খোকসা হেলথ কেয়ার নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদারি মালিক।
নিহত ছাত্রীর চাচা ইস্তেকবাল চয়ন জানান, তারা মেয়ের আত্মহননের কারণ বুঝতে না পেরে ওই সময় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন। সুইসাইড নোট পাওয়ার পর ওই দিনই তারা সেটি থানায় জমা দেন এবং থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ এ ঘটনায় মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে ওই ছাত্রীর বাবা খোকসা পৌরসভার কর্মকারী আজমল হোসেন ও মা রেশমী পারভিন বন্যা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।