রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সফররত ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওসাইমিন এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এই সংলাপ নেতৃবৃন্দের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবে।’
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফ্রিংয়ে একথা জানান।
প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ওআইসির মহাসচিব অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন ‘আপনি খুব উদার’। এসময় ওআসি মহাসচিব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম।
বৈঠকে ওআইসির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমি সবসময় বলি যে আপনি একজন সফল নেতা এবং বিশ্বের মুসলিম নারীদের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
ড. ওসাইমিন এ সময় বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা আন্তরিক, কঠোর পরিশ্রমী এবং পেশাদার। আগামী বছর বাংলাদেশে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন এবং ওআইসি পর্যটনমন্ত্রীদের সম্মেলন, দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ওআইসি বাংলাদেশের নারীদের যেকোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারলে খুশি হবে।
ওআইসি মহাসচিব বলেন, তার সংস্থা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিদ্যায় সদস্য দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। আমরা মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বলছি, কারণ আমরা শরণার্থীদের ছুঁড়ে ফেলতে পারি না।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শরণার্থীরা যাতে ভালোভাবে থাকতে পারে এজন্য তার সরকার ইতোমধ্যে তাদের অস্থায়ী বসবাসের জন্য একটি দ্বীপ বেছে নিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে মহাসচিব বলেন, এটি খুবই চমৎকার সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের বর্ডার গার্ডের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এই দুই দানবের বিরুদ্ধে তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং এর প্রতিরোধে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করেছে। ইমাম, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে এবং এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে কিছু রাজনৈতিক দল দেশে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ওআইসি মহাসচিব চারদিনের সরকারি সফরে গতরাতে ঢাকায় পৌঁছান। জেদ্দাভিত্তিক এই সংস্থার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
সৌদি আরবের প্রাক্তন সামাজিকবিষয়ক মন্ত্রী ড. ওসাইমিন গত বছরের ১৭ নভেম্বর ওআইসির নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে ওআইসি গঠিত হয়। ওআইসি’র সদস্য দেশ ৫৭টি।