আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন’ এ যোগ দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পরিবেশ বিপর্যয় অবলোকন করতে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে তিনি ক্যাম্প-২০’র মাঝে করা হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। তার সঙ্গে আসেন সম্মেলনে আসা মার্শাল আইল্যান্ডসের রাষ্ট্রপতি হিলদা হিনে এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রোগ ব্রেন্ডে ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ স্কেফার, ত্রাণ সচিব শাহ কামাল, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকসহ পদস্থ ডজনাধিক কর্মকর্তা।
তাদের আগমন উপলক্ষে কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন ও কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, হেলিকপ্টারযোগে ক্যাম্প-২০’র হেলিপ্যাডে অবতরণের পর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব উখিয়ার কুতুপালং ২০ নম্বর ও ১৭ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বাস্তুহারা রোহিঙ্গা নর-নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভাব অভিযোগ ও দাবিগুলো শুনেন।
২০ নম্বর ক্যাম্পের হেডমাঝি সিরাজুল মোস্তফা জানিয়েছেন, ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বান কি মুন চলমান বৈরি আবহাওয়ায় রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, আবাসন বিষয়ে নানা দিক প্রশ্ন করেন। এসময় অতিবৃষ্টিতে ভোগান্তিসহ শঙ্কা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করার কথা তুলে ধরা হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রিত জীবন থেকে মুক্ত করে নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সহযোগিতার দাবি জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া বর্বরতা আর না হওয়ার নিশ্চয়তাসহ অধিকার পেলে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে প্রস্তুত বলে জানানো হয় বান কি মুনকে। রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রতিনিধিদল ১৭ ও ২০ নম্বর ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করেন। শেষে বান কি মুন রোহিঙ্গাদের দাবির প্রতি সহমত পোষণ করে সহযোগিতা অব্যহত রাখার আশ্বাস দেন বলেও উল্লেখ করেন সিরাজুল মোস্তফা।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগমন উপলক্ষে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কসহ ক্যাম্প অভ্যন্তরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সময়ের অভাবে কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার এলাকার প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়। ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে বান কি মুনের দল ক্যাম্প ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন কুতুপালং আন-রেজিষ্ট্রার্ট ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নুর।
এর আগে সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের (জিসিএ) ঢাকা বৈঠকে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ুু সঙ্কট মোকাবিলায় বিশ্বের কাছে শিক্ষকে পরিণত হয়েছে। অভিযোজন বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে বিশ্বের অনেক কিছু শেখার আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছি জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা শুনতে ও জানতে। এ ক্ষেত্রে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাথমিক শিকার তারা আমাদের সেরা শিক্ষক এবং তারা খোলা মনে আমাদের শেখাবেন।
বান কি মুনের মতে, বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে যারা সারা পৃথিবীকে এ বিষয়ে শেখাতে পারে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ হলো সেরা। ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরের উচ্চতা মাত্র ১ মিটার বৃদ্ধি পেলেই বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি তলিয়ে যাবে। সাগরের উচ্চতা সামান্য বৃদ্ধি পেলেই রাজধানী শহর ঢাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন বান কি মুন।
প্রসঙ্গত, বান কি মুন ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন’ এ যোগ দিতে দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশে আসেন। এ আগমনে বান কি মুন তার সফরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের কর্মসূচিও রেখেছিলেন এবং তা পরিদর্শনও করেন।