রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মালদ্বীপও, লড়বেন আমাল

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) লড়ছে গাম্বিয়া। তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে এ লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে মালদ্বীপ। সেজন্য আরব সাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে প্রখ্যাত ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী আমাল আলামুদ্দিনকে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।

মালদ্বীপের প্রস্তাব পেয়ে আমাল আলামুদ্দিন বলেন, মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যার জবাবদিহির বিষয়টি দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে আছে। আমি রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার অংশ হতে মুখিয়ে আছি।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা ও ধর্ষণ শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে থাকে রোহিঙ্গারা। সেই দফায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। তার আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত ছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা।

নতুন করে মিয়ানমারের ওই দমন-পীড়ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হলে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু রাখাইনকে উত্তপ্ত ও অনিরাপদ রেখে মিয়ানমার এ বিষয়ে তাদের দূরভিসন্ধিই প্রকাশ করেছে বারবার।

এর মধ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। সে মামলা শুনানিতে গড়ালে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি।

 

শুনানির পর গত ২৩ জানুয়ারি আইসিজে এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়। এতে চারটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। এ চার আদেশ হলো-
১. রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ এবং গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ।
২. রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে আগামী চার মাসের মধ্যে মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। প্রথম প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রতি ছয় মাস পর পর একই ধরনের প্রতিবেদন আদালতের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।
৩. গাম্বিয়া ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালতের কাছে প্রয়োজনীয় বিষয়ে আবেদন করতে পারবে।
৪. মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রমাণাদি সংরক্ষণ করতে হবে।

এছাড়া গণহত্যা সনদের ২নং ধারা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাবও দেন আদালত।

অন্তর্বর্তী আদেশ ঘোষণা হলেও বিচারাধীন ওই মামলার চূড়ান্ত রায়ের জন্য নিরলস লড়ছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। তাদের সে লড়াইয়ে মালদ্বীপের অংশগ্রহণ রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মালদ্বীপ আইনজীবী হিসেবে যাকে নিয়োগ দিয়েছে, সেই আমাল আলামুদ্দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় মামলার আইনজীবী বা পরামর্শক হিসেবে লড়ে ফল পাইয়ে দিয়েছেন।

লেবানিজ বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ আইনজীবীর মক্কেলদের তালিকায় আছেন মালদ্বীপেরই সাবেক প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে স্পিকার) মোহাম্মদ নাশিদ, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যুলিয়া ত্যমোশেঙ্কো, মিশরীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান সাংবাদিক মোহাম্মদ ফাহমি ও শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ।

নাশিদকে ২০১৫ সালে এক দুর্নীতি মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও ওই সাজা থেকে তাকে নিস্তার পাইয়ে দেন হলিউডের মহাতারকা জর্জ ক্লুনির পত্নী আমাল আলামুদ্দিন।