রেলস্টেশনের বিশ্রামাগারে উন্মুক্ত পাঠাগার

:
: ৩ years ago

বইপড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তা মানুষের মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্ক একটি গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ। শরীর সুস্থ রাখতে আমরা যেমন ব্যায়াম করি; তেমনই মস্তিষ্ককে সবল ও কর্মচঞ্চল রাখতে বইপড়া বিশেষ জরুরি। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে বগুড়ার সোনাতলা রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের অবসর সময়ে বইপড়ার আনন্দ দিতে উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর উদ্যোগে আলোর প্রদীপের বাস্তবায়নে ‘যোগাযোগ’ নামে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়।

 

স্বাধীনতা দিবসে পাঠাগারটি উন্মুক্ত করেন সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন। এসময় অনলাইনের মাধমে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে পাঠাগারের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই। তিনি বলেন, ‘এ উদ্যোগে স্বশরীরে না থাকতে পারলেও ভিডিওকলে যুক্ত হয়ে অনেক আনন্দিত। এমন একটি উদ্যোগ সত্যি অনেক প্রশংসনীয়। আমার অবস্থান অনেক দূরে হলেও এ উদ্যাগের খবর পেয়ে এ কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করছি। আমি চাই মানুষ অবসর সময়টাকে বইপড়ার আনন্দের মধ্যদিয়ে উপভোগ করুক।’

সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘এমন একটি উদ্যাগের কথা যখন জানতে পারি; তখন আর না করতে পারিনি। ভেবেছি এমন একটি উদ্যাগে আমার থাকা উচিত। আসলে প্রযুক্তির কল্যাণে এখনকার প্রজন্মের অনেকেই বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে। আমরা আমেরিকা বা ইউরোপের দেশে এমন উন্মুক্ত পাঠাগার দেখতে পেলেও আমাদের দেশে প্রচলনটি এখনো শুরু করা যায়নি। আমি উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী ও আলোর প্রদীপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

 

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক সাজেদুর আবেদীন শান্ত বলেন, ‘আমি নিয়মিত বিভিন্ন কাজে সোনাতলা থেকে বগুড়া বা ঢাকায় যাতায়াত করি ট্রেনে। ট্রেন বিলম্ব হওয়ায় অবসর সময় পার করতে হয়। তখনই আমার মাথায় এলো, যদি এখানে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার করা যায় তাহলে ট্রেনের অপেক্ষমান যাত্রীরা বই পড়তে পারবেন। তারা অবসর সময় কাজে লাগাতে পারবেন। আলোর প্রদীপের সহযোগিতায় কাজটি শুরু করি। যারা আমাদের অর্থ, বই ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’

আলোর প্রদীপ সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন সজিব বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ বেশি বেশি বই পড়ুক। বই মানুষের মনকে পরিশুদ্ধ করে। সেই ভাবনা থেকেই যখন উন্মেষের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব আসে; তখন প্রস্তাবটি আমরা গ্রহণ করি এবং বাস্তবায়নের উদ্যাগ নেই। এটি বাস্তবায়নে সাজেদুর আবেদীন বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাকে ধন্যবাদ। মানুষ অন্তত রেলের জন্য যে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেন; সেই সময়টা যাত্রী ছাউনিতে বসে বই পড়ুক। আনন্দে সময় কাটানোর মধ্যদিয়ে মনোজগতকে পরিশুদ্ধ করুক।’

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সোনাতলা উপজেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি মো. মহসিন আলী তাহা, লেখক ও প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন, ক্রিকপ্লাটুন বগুড়ার সমন্বয়ক রাশেদুজ্জামান রন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রবিউল ইসলাম, আলোর প্রদীপের সাবেক চেয়ারম্যান এম এম মেহেরুল, উই আর ওয়ান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফিরোজ কবির ফারুক, আলোর প্রদীপের সদস্য রাজিবুর রহমান শীতল, সাকি সোহাগ, আলী আহসান মুজাহিদ, আল শাহরিয়ার পাপ্পু, লেখক জামিল উদ্দিন প্রমুখ।