রুশ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত, বন্দিসহ নিহত ৭৪

:
: ৫ মাস আগে

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার একটি ইউশিন আইএল-৭৬ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৭৪ যাত্রী নিহত হয়েছেন। বিমানটিতে ৬৫ ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দী, ৬ ক্রু-সহ ৩ জন এসকর্ট ছিলেন।

 

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আরআইএ ও কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।।

এপি জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে ঘটেছে।

 

বেলগোরোদের আঞ্চলিক গভর্নর ভায়াচেসলাভ গ্লাদকোভ জানিয়েছেন, তিনি বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তবে, বিস্তারিত কিছু জানাননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে ইয়াবলোনোভো গ্রামে একটি বিমান খাড়াভাবে আছড়ে পড়ছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

 

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। উদ্ধার অভিযানে একটি বিশেষ সামরিক কমিশন দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে রয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ জানিয়েছেন, তারা বিমান বিধ্বস্তের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। তবে, তিনিও বিস্তারিত কোনও কিছু জানাননি।

ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা প্রকাশনা, একটি সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছিল যে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী আইএল-৭৬ বিধ্বস্তের জন্য দায়ী। কিন্তু বিমানটিতে ইউক্রেনীয় বন্দীদের সম্পর্কে জানার পরে তারা বার্তাটি মুছে ফেলে।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আরআইএ আরও জানিয়েছে, বুধবার (২৪ জানুয়ারি) জানা গেছে, বেলগোরোডের কাছে ব্লিঝনো গ্রামে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন আটকানো হয়েছে। এ ছাড়াও, এই অঞ্চলের গভর্নর, ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার একটি সতর্কতা প্রকাশ করেছেন। পরে কোরোচানস্কি জেলায় গুরুতর জরুরি অবস্থার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তবে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, বেলগোরোড অঞ্চলটি ইউক্রেনের সাথে সীমান্তবর্তী। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী নিয়মিত এই অঞ্চলে গোলাগুলি চালায় এবং নাশকতা চালানোর চেষ্টা করে। এ অঞ্চলে উচ্চমাত্রায় সন্ত্রাসী হুমকি রয়েছে।

 

ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৮ জন নিহত

 

 

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া, হামলায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একইসঙ্গে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৮ জন নিহত এবং ১৩০ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, হামলায় ১৩৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকা পড়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বিবিসি বলছে, উত্তর-পূর্বে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, রুশ হামলায় আট বছর বয়সী একটি মেয়েসহ আটজন নিহত হয়েছেন। সেন্ট্রাল ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের পাভলোহরাদে একজন নারী নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া, রাজধানী কিয়েভে ২২ জন আহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লেগেছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা আগে জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মঙ্গলবার রাতে তার ভিডিও ভাষণে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জীবনকে আধুনিক রাশিয়া তার নিজের জন্য হুমকি বলে মনে করে। এই রাষ্ট্রটি একটি সন্ত্রাসী।’

এদিকে, মঙ্গলবার সকালের এই হামলায় বিশেষভাবে খারকিভ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মেয়র ইহোর তেরেখভ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শহরের ফ্ল্যাটের একটি ব্লকের অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের জন্য ধ্বংসস্তূপের ভেতরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

হামলার পর শহরের আকাশ আগুনে পোড়া কমলা রঙে পরিণত হয়। মূলত শহরটিতে হামলায় একাধিক ধরনের রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। শহরটি রাশিয়ান সীমান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থিত এবং এই কারণে আকাশপথে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আটকানো বেশ কঠিন।

খারকিভের বাসিন্দা নাটালিয়া বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এতো ‘জোরে’ বিস্ফোরণের শব্দ হয়েছে বলে তিনি মনে করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। পুরোটাই খুব জোরে ছিল। সেখানে বিস্ফোরণ হয়, তারপর আরও দশ সেকেন্ড পর আরেকটি বিস্ফোরণ।’

তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ বিদ্যুৎ ও উত্তাপহীন অবস্থায় রয়েছে। ভয় ও ঘৃণা ছাড়া এই মুহূর্তে আমি কিছুই অনুভব করছি না।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও সাত জন আহত হয়েছেন বলে তেরেখভ জানিয়েছেন।

এদিকে, কিয়েভে সকালে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিমান হামলা চলে। যা গত ২ জানুয়ারির পর থেকে দীর্ঘতম। হামলায় সেখানে ফ্ল্যাটের একটি ব্লকে আগুন লাগলে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন এবং সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।