রুদ্র অয়ন’র রম্যগল্প “রাম ছাগল ”

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

রাম ছাগল 
রুদ্র অয়ন

চুনু মিয়ার এক আত্মীয় ব্যারিষ্টার। আরেকজন এমপি। সম্পর্কে নিজের কেউ নন, দূর সম্পর্কের। ঐ দু’জন লোক তার আত্মীয় এই তকমা গায়ে লাগিয়ে যথা তথা, গালগল্পের শেষ নেই ওর। আর কথাবার্তায় নিজেকে অন্য সবার চেয়ে বেশ বুদ্ধিমান এটাই সবখানে জাহির করতে চায় চুনু মিয়া।যেখানেই যেতো সেখানেই সে সবাইকে বোঝাতে চাইতো সে খুব চালাক আর বুদ্ধিমান। অন্য মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টায় সব সময় সদা তৎপর থাকতো।
 চুনু মিয়া একদিন হাটে গেলো একটি ছাগল কেনার উদ্দেশ্যে । দেখেশুনে সে হাটের সবচেয়ে ভালো একটা রাম ছাগল কিনে নিলো। ছাগলটা বেশ বড় আর দেখতে নাদুস নুদুস, বেশ সুন্দর। ছাগলটার গলার দড়ি সে এক হাতে ধরে সাত পাঁচ অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে আপন মনে হাঁটতে লাগলো ।
চুনু মিয়া যে রাস্তা ধরে যাচ্ছিলো সেই রাস্তার পাশেই ছিলো দুই  চালাক চোরের আস্তানা। চুনুকে দেখতে পেয়েই দুই চোর ফন্দি আঁটলো যে এই রাম ছাগলটা তারা চুরি করবে। চুনু মিয়া নিজের খেয়ালে হেটে চলেছে। এক চোর চুনুর অজান্তেই কৌশল করে ছাগলের গলার দড়ি খুলে নিজের গলায় পরে নিল। আর অপর চোর ছাগলটা নিয়ে চলে গেলো।
কিছুদুর যাওয়ার পর চুনু মিয়া পেছনে ফিরে তাকিয়েই চমকে ওঠলো!
বিষ্ময়ের স্বরে বললো, ‘এটা কি হলো রে বাবা! রাম ছাগলের জায়গায় তুমি কোথা থেকে পয়দা হইলা ভাই?’
চোর কাচুমাচু করে বললো, ‘ভাই, দুঃখের কথা কি আর কমু, আসলে আমিই আপনার রাম ছাগল।’
চুনু মিয়া চেচিয়ে ওঠে, ‘আমারে কি বোকা পাইছেন নি?’
চোর বলতে লাগলো, ‘না ভাই, আপনি বোকা না। আমি আসলে এক মহাপাপী। আমার মায়ের গায়ে একদিন হাত তুলেছিলাম আর হেই কারনেই অভিশাপে আমি মানুষ থেইক্কা রাম ছাগল হইয়া গেছি।’
চুনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তো আইজকা কিভাবে আবার ছাগল থেইক্কা মানুষ  হইলেন, ভাই?’
চোর বললো, ‘আসলে আমার মা কইছিলো যে, যদি কোনদিন কোন ভালা মনের এবং সৎ, বুুুদ্ধিমান মানুষ আমার মনিব হয় তাহলেই আমি ছাগল থেইক্কা আবার মানুষ হইয়া যামু। আপনে একজন সৎ এবং ভালা মানুষ। তাই আইজকা আমি আপনের জন্যেই  মানুষ হইবার পারছি। আপনের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই ভাই।’
চোরের মুখে এসব কথা শুনে চুনু মিয়া অত্যান্ত খুশী হয়ে গেলো। আহ্, কতো ভালো মানুষ সে। তার কারণেই আজ এক লোক  অভিশাপ মুক্ত হলো।
চুনু মিয়া তখন দড়ি থেকে চোরকে মুক্ত করে  দিয়ে তাকে মায়ের কাছে ফিরে গিয়ে মায়ের যত্ন আত্তি করতে বললো।চোরটা তখন লম্বা সালাম  দিয়ে চুনু মিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
পরদিন দুই চোর সবাইকে বলে বেড়ায় কিভাবে তারা চুনু মিয়াকে বোকা বানিয়েছে। সারা হাট, বাজারে সেই খবর ছড়িয়ে গেলো। সবাই হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। দুই চোর আবার সেই রাম ছাগলটা বিক্রি করে দিলো ছাগলের আগের মালিকের কাছে। ছাগলের মালিক আবারও সেই ছাগলটাকে পরবর্তী হাটের দিন বিক্রির জন্য নিয়ে এলো।
চুনু মিয়া আবার হাটে এলো ছাগল কিনতে। এসেই সে হাটের হালচাল দেখে কিছুটা অবাক হলো! কি রে, কি হলো! কেমন যেনো লাগছে আজ সব কিছু!  একটু পরে সে আবার তার সেই রাম ছাগলটাকেও দেখতে পেলো।
মান-সম্মানের ব্যাপার! সবার হাসির খোরাক হতে চায়না সে। তাই তখন সোজা ছাগলের কাছে এসে চুনু বললো, ‘তোমারে হালা কইছিলাম, মায়ের সেবা করতে। তুমি তা করো নাই তাই আবারও ছাগল হইয়া গেছো। এইবার আমি আর তোমারে কিনুম না। তুমি আমার মতো ভালা মনের মানুষ, বুদ্ধিমান- চালাক মানুষ এই এলাকায় আর একটাও খুইজ্জা পাবা না। এহন সারা জীবন রাম ছাগল হইয়াই তুমি থাকো আর ব্যা ব্যা করো।’