রাষ্ট্রপতি পদে আবদুল হামিদই আ.লীগের প্রার্থী

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তিনিই হতে যাচ্ছেন দেশের ২১ তম রাষ্ট্রপতি।

বুধবার রাতে গণভবনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবদুল হামিদের নাম প্রস্তাব করেন আর তোফায়েল আহমেদ তার নাম সমর্থন করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে, সবকিছু বিবেচনা করেই; তার সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, দেশের ও জনগণের প্রতি তার কমিটমেন্ট, প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এই পদে পুনরায় সমাসীন থাকা দেশের প্রয়োজন। তাই আমরা সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মনোনয়ন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট হবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি।

তবে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট হবে কি না, সেটি এখনও নিশ্চিত না। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল প্রার্খী দেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আর অন্য কেউ প্রার্থী না দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন আবদুল হামিদ।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে একবারই মাত্র ভোট হয়েছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। এরপর আর কোনো নির্বাচনেই ভোট হয়নি। প্রত্যেক নির্বাচনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। আর সংসদে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের ইচ্ছাতেই নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি। কারণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেয়ার এখতিয়ার নেই সদস্যদের। সেই হিসাবে ক্ষমতাসীন দল যার মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে, তার বাইরে কারও নির্বাচিত হয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। ফলে আবদুল হামিদই এরশাদ পতনের পর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন, সেটি বলাই যায়।

১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পরে বিএনপির প্রথম আমলে দলের নেতা আবদুর রহমান বিশ্বাস, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের বাইরে থেকে সাহাবুদ্দিন আহমেদ, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং চাপের মুখে তার পদত্যাগের পর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হন।

জরুরি অবস্থা জারির সুবাদে ইয়াজউদ্দিন সাত বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তবে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হননি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিলে। সংবিধান অনুযায়ী এক জন দুই দফায় রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি পদটি আলঙ্করিক হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক শক্তি যোগায় পদটি। আর ভোটের বছর নানা হিসেব নিকেশ করেই আগাতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষিতে এই পদের জন্য বেশ কয়েকজনের নাম এসেছিল গণমাধ্যমে। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও যাদের নাম এসেছিল তাদের বিষয়ে চিন্তাভাবনাও করা হয়েছিল। তবে শেষমেশ আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয় মেয়াদে রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানিয়েছেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বা ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির আগ পর্যন্ত সে সময়ের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। এই বিবেচনায় এই পদে পরিবর্তন আনার কোনো ভাবনা গুরুত্ব পাচ্ছে না।

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের  ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর  ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।