শীতল যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সঙ্গে করা ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার ওয়াশিংটন এ ঘোষণা দেয়।
১৯৮৭ সালে দু’দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিটি ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস বা আইএনএফ নামে পরিচিত। এই চুক্তির ফলে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ হয়। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো অভিযোগ করে, চুক্তি ভঙ্গ করে রাশিয়া নতুন ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে। মস্কো তা অস্বীকার করে। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া সহযোগিতা না করলে ২ আগস্ট আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে ওয়াশিংটন। জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন সেই চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুই দেশের রেষারেষিতে শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল ৩২ বছরের পুরনো চুক্তিটি।
এখন এই চুক্তির ‘মৃত্যু’ হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর এএফপি ও বিবিসির।
ট্রাম্পের ঘোষিত দিনেই ব্যাংককে আঞ্চলিক সম্মেলনে চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এর কয়েক মিনিট আগে রাশিয়া চুক্তিটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ফলে কয়েক মাস আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, চুক্তিটি আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে শুক্রবার পম্পেও বলেন, ‘চুক্তিটির মৃত্যু হওয়ার জন্য একমাত্র রাশিয়াই দায়ী।’
এর কিছুক্ষণ আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়াশিংটনের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলেই চুক্তিটির এমন পরিণতি হলো। তবে চুক্তির মৃত্যু হলেও রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াভকভ পরমাণু সমৃদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন স্থগিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন।
মস্কো ৯এম৭২৯ অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ করছে– কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন এবং উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ২৯টি দেশের সামরিক জোট ন্যাটো অভিযোগ করে আসছে। ন্যাটো বলছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। তবে রাশিয়া বলছে, সেগুলোর পাল্লা ৪৮০ কিলোমিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রের কথা উল্লেখ করে শুক্রবার পম্পেও বলেছেন, ‘চুক্তির নিয়মের মধ্যে থাকতে রাশিয়া ব্যর্থ হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্ভাচেভের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া আইএনএফ চুক্তিকে বিশ্বের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। এখন যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, শুধু দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের চুক্তির পরিধি সীমাবদ্ধ না রেখে তাতে আরও দেশের যুক্ত হওয়া উচিত। ওয়াশিংটন স্পষ্টভাবেই সেখানে চীনের নাম বলেছে। কারণ ওয়াশিংটন মনে করছে, চীন দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
পম্পেও শুক্রবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন পথের সন্ধান করছে। তাতে শুধু দুই পক্ষ না, বহু পক্ষ থাকবে। যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে চীনেরও সংযুক্তি চায় তার দেশ।
আইএনএফ চুক্তির ‘মৃত্যু’র জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে ন্যাটোও। জোটের প্রধান জেন্স স্টোলেনবার্গ শুক্রবার বলেছেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলবে ন্যাটো এবং ইউরোপের মাটিতে নতুন করে কোনো পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মতে, বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রের ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। আইএনএফ চুক্তি অকার্যকর হওয়ায় নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে।