রাজীবের খালার মিথ্যাচারের জবাব দিলেন অনন্ত জলিল

:
: ৬ years ago

রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর পরে মৃত্যুবরণ করা কলেজছাত্র রাজীবের ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। গত ২২ এপ্রিল তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এজেআই গ্রুপের কার্যালয়ে রাজীবের ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহকে ডেকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ওই সময় রাজীবের খালা জাহানারা বেগম ও মামা জাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সেই খবর পুরনো।

কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে রাজীবের খালার দেয়া বক্তব্যে বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। রাজীবের খালা দাবি করছেন, অনন্ত জলিল ঘোষণা দিলেও রাজীবের ছোট দুই ভাইয়ের জন্য প্রত্যাশিত সাহায্য করেননি। তিনি আরও বলেন, অনন্তর ঘোষণার পর তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা করেছেন। কিন্তু তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়েছে।

এদিকে এই বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। তিনি সোমবার সকালে বলেন, ‘রাজীবের দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নেয়াটাই মুখ্য বিষয়। তাদের থাকা, খাওয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্রসহ জীবন ধারণের জন্য যাবতীয় ব্যয় আমি বহন করবো সেটা নিশ্চিত করেছি ওদের দুই ভাইকে। আমি ওদের পাশে দাঁড়াতে চাই বলেই নিজের লোক দিয়ে রাজীবের ছোট দুই ভাই ও খালা এবং মামাকে খুঁজে বের করে আমার অফিসে নিয়ে এসেছি। আমি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, রাজীবের মৃত্যুর পর ওর ছোট দুই ভাইয়ের আর কেউ নেই। তাই তাদের দায়িত্ব নিতে চেয়েছি। এজন্য আমি আমার ফ্যাক্টরির কাছাকাছি একটি ভালো মাদ্রাসায় তাদের ভর্তির জন্য কথাও বলেছি। তাদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করেছি। তারা যেন আমার সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে একবার দেখা করতে পারে সেই কথাও বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যখন ওরা দুই ভাই আমার অফিসে এলো, আমি দেখলাম ওদের সঙ্গে আপন মামা খালা রয়েছেন। তারা ছেলে দুটোকে বর্তমানে যেখানে আছে সেখানে রেখেই পড়াশোনা করাতে চান। তাই আমিও ভাবলাম, আপন কোনো মানুষের কাছাকাছি থাকলে তারাও হয়তো ভালো থাকবে। মানসিকভাবে শান্তি পাবে। তাই তাদের শর্ত মেনে যেখানে আছে সেখানেই পড়াশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলাম। সেইসঙ্গে জানিয়ে দিলাম তাদের কিছু খেতে ইচ্ছে হলে, কিছু পরতে ইচ্ছে হলে আমাকে জানাতে পারবে। আমি সেই ব্যবস্থা করবো।

তাদের সবকিছু দেখভালের জন্য আমার অফিসের কর্মকর্তা মুফতি রুহুল আমিনকে দায়িত্বও দিয়েছি। মুফতি সাহেবকে মাদ্রাসায় গিয়ে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সব দায়িত্ব মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে বুঝিয়ে দিতে বলেছি। আমার লোকজন সেটা করেছেও। তবে ওদের খালা কেন বলছেন যে প্রত্যাশিত সাহায্য মেলেনি? উনারা আসলে একসঙ্গে অনেক টাকা পাবেন সেটাই হয়তো প্রত্যাশা করেছিলেন।

কিন্তু এখানে নগদ টাকার প্রশ্ন আসবে কেন? রাজীব দুর্ভাগ্যের শিকার। ওর দুটি ভাইকে আমি নিজের ভাই মনে করে ওদের দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের এককালীন টাকা দিয়ে কেন বিদায় করে দিতে হবে? আমি তাদের দায়িত্ব পালন করবো। ওদের শিক্ষা শেষ হলে চাকরির ব্যবস্থাও হতে পারে। কেন আজেবাজে মিথ্যে ছড়ানো হচ্ছে?’

ঢাকাই ছবির প্রথম ডিজিটাল নায়ক অনন্ত বলেন, ‘ওইদিন আমার অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আমি ছেলে দুটির জন্য কিছু কিনে দিতে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এর বেশি কিছু নয়। সেদিন আলোচনা চলাকালীন রাজীবের খালা আমাকে বলেছিল ছেলে দুটিকে তাদের তত্ত্বাবধানে আলাদা বাসায় রাখতে চান। কিন্তু তাতে আমি রাজি হইনি। কারণ ওরা আগে থেকেই মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতো। হোস্টেলে ছাত্রদের পড়াশোনার বিষয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত খোঁজ-খবর নেন। সেখানে থাকলে লেখাপড়াও ভালো হবে। তাই বাসার রাখার পক্ষে আমি ছিলাম না। উনারা এতই যদি আন্তরিক হতেন দুই ভাইয়ের প্রতি তবে রাজীব বেঁচে থাকতে কেন ওদেরকে এতিমখানায় দিয়েছিল?

আমি খোঁজ নিয়ে জেনিছ, ওই দুই ভাই মূলত যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত তামিরুল মিল্লা­ত মাদ্রাসায় এতিম কোটায় পড়াশোনা করছিল। তাদের খুব বেশি খরচ লাগে না। এরপর আমার অনুরোধেই তাদেরকে এতিম কোটা থেকে সাধারণ কোটায় নিয়ে আসেন প্রিন্সিপাল। সাধারণ কোটায় থেকে পড়াশোনার জন্য মাসিক যে খরচ লাগবে সেটা পরিশোধও করেছি আমি এরই মধ্যে। এভাবে প্রতিমাসে তাদের পড়াশোনা ও ভরণপোষণের সব খরচ অফিসিয়ালি প্রিন্সিপালের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে আমার পক্ষ থেকে। কিন্তু ওদের দুই ভাইয়ের খালা কিংবা মামাদের কোনো টাকা পয়সা দেব সেটা আমি কখনো বলিনি, আর সেটার প্রয়োজনও দেখছি না। কথা অনুযায়ী দায়িত্ব নিয়েছি।’

অনন্ত আরও জানান, ‘ওদের খালা ও মামা ছেলে দুটোর অসহায়ত্ব ও দুর্ভাগ্য নিয়ে খেলছেন। আমার দায়িত্ব নেয়ার পরও শুনেছি ছেলে দুটিকে নিয়ে তার খালা এবং মামা আরও অন্যান্য জায়গায় যাচ্ছেন সাহায্যের জন্য। তাতেও আমি নিষেধ করিনি। বরং এটাও বলেছি, আমি তো সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিলাম, তারপরও যদি কেউ তাদের নগদ সাহায্য করতে চায় তাহলে দুই ছেলের নামে দুটো ব্যাংক একাউন্ট করে সেখানে জমা করে রাখতে। ভবিষ্যতে তাদের কাজে লাগবে। এসব কিছুর পরও তারা কেন অভিযোগ করছে সেটা বোধগম্য নয়।’

অনন্ত বলেন, ‘আমি ওদের দায়িত্ব নিয়েছি এবং সেটা পালন করে যাবো। আমার লোক তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার তদারকি করবে। ওদের যা কিছু প্রয়োজন হয় সেটা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সাহেবকে জানালেই পেয়ে যাবে।’