চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার বিশাল বাজেটের লক্ষ্য নিলেও বাস্তবায়নে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। মূলত রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি না আসা এর পেছনে অন্যতম কারণ। অন্যদিকে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রিও নেমেছে তলানিতে।
এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা বেড়ে গেছে। অর্থবছরের সাত মাসেই পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও এবার সরকারের বাজেটঘাটতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা লক্ষ্যমাত্রা বেশি করে ধরি, তাই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্জন কম। তবে গত বছরের তুলনায় আদায় বেড়েছে।
সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রধান প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র পৌনে সাত শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ এনবিআরের সাময়িক হিসাবে দেখা গেছে, সাত মাসে শুল্ক, মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) ও আয়কর মিলিয়ে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের বাদবাকি পাঁচ মাসে আদায় করতে হবে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি, যা কার্যত অসম্ভব। বছরের সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া বিষয়ে এনবিআরের কিছু যুক্তি রয়েছে। আমদানি কমে যাওয়াসহ কিছু বিষয় বলা হয়। এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বলেছেন, রাজস্ব আদায়ে কৌশলগত পদক্ষেপ নেবেন। গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিম্নমুখী গতি ফিরিয়ে আনাই হবে তার জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ। রাজস্ব প্রশাসনে নানা গ্রুপিং, লবিং থাকায় বদলি-পদোন্নতি নিয়ে অতীতে বিতর্ক কম হয়নি। এবারে ব্যাপক রদবদলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও সূত্র জানায়। সূত্রমতে, বিভিন্ন সময় এনবিআরের সদস্য ও কমিশনারদের মধ্যে দ্বন্দ্বে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। যে কারণে এবারে যাচাইবাছাই করে রদবদল করা হচ্ছে।
এদিকে সঞ্চয়ে বিনিয়োগের অবস্থাও ইতিবাচক নয়। চলতি অর্থবছর সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অতীতের চেয়ে অনেক কমিয়ে ঠিক করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে এ খাতে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া সর্বশেষ ডিসেম্বরে বিনিয়োগের চেয়ে উত্তোলন বেশি হওয়ায় নিট বিনিয়োগ কমে গেছে ৪০৮ কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্রে এমন চিত্র দেখা যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের ব্যাংক ঋণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। অথচ পুরো অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে পুরো বছর সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com