বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে শনিবার (৩ ডিসেম্বর)। তবে আগেভাগেই আসছেন অনেক নেতাকর্মী। আসার সময় পথে পথে পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লম্বা পথ পায়ে হেঁটেও নেতাকর্মীদের অনেকে সমাবেশস্থলে আসছেন।
রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) শনিবার বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে এখন মাঠ ও মঞ্চ প্রস্তুতের কাজে নিয়োজিত ছাড়া অন্য নেতাকর্মীরা মাঠে ঢুকতে পারছেন না। তাই তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের ঈদগাহ মাঠে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ি গ্রাম থেকে এসেছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুধবার রাতে তারা ২২টি গাড়িতে একসঙ্গে বগুড়া থেকে আসছিলেন। রাজশাহী শহরে ঢোকার আগে পবার নওহাটা কলেজ মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। এরপর বাসগুলোকে বগুড়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা প্রায় ১৩ কিলোমিটার হেঁটে এখানে এসেছেন। আরও অনেকেই রাজশাহী ঢোকার পথে পুলিশের বাধা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, আসার সময় নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে এটা ঠিক নয়। যেহেতু পরিবহন ধর্মঘট চলছে, তাই অন্য কেউ বাঁধা দিতে পারে।
বিএনপির এই সমাবেশের আগে বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘট যে হবে তা আগেই জানতেন নেতাকর্মীরা। তাই দূরের নেতাকর্মীদের অনেকে ধর্মঘট শুরুর আগেই চলে এসেছেন। বৃহস্পতিবার বাস বন্ধ থাকলেও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনে এসেছেন অনেকে। সবাই আশ্রয় নিয়েছেন ঈদগাহ মাঠে।
এসব নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে এনেছেন হাঁড়ি-পাতিল, চাল, ডালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সঙ্গে সামিয়ানা এনে করেছেন তাবু। তার নিচে নেতাকর্মীদের কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউ গল্প করছেন। তাবুগুলোর পাশেই চুলো করে রান্নাবান্না চলছে। চলছে তিনবেলা খাওয়া-দাওয়া। এর ফাঁকে ফাঁকে এখানে-ওখানে গোল হয়ে নানা শ্লোগান দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, একেক জেলার নেতাকর্মীরা একেক স্থানে তাবু করেছেন। সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী ইতোমধ্যে এসেছেন বগুড়া থেকে। এর বাইরে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাটের কিছু নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। রাজশাহীর পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর নেতাকর্মীদের এখনও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। সমাবেশের আগের দিন কিংবা সেদিনই সকাল সকাল তারা চলে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঈদগাহ মাঠে ঘুরে ঘুরে সবার সাথে কুশল বিনিময় করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ অন্য নেতারা।
দুলু বলেন, বিভাগের প্রতিটি থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারপরও রাজশাহীর দিকে ছুটছেন নেতাকর্মীরা। কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ তাদের পথে পথে বাঁধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যত বাধাই অসুক না কেন আমাদের সমাবেশ সফল হবে। মানুষ পায়ে হেঁটে, সাইকেল, ভ্যান, ট্রেম্পু, রিকশায় চড়ে হলেও এই সমাবেশে আসবে।
তবে বিএনপির এই সমাবেশকে ‘পিকনিক’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর বিএনপি মাঠে বেরিয়েছে। একটু আগে ওদের সমাবেশের ওইদিক দিয়ে এলাম। দেখলাম, রান্নাবান্না চলছে। একটা পিকনিক পিকনিক ভাব। সেটা করুক। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু জনমালের ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো সংকট তৈরি করলে তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়া হবে।’
বিএনপির দেশব্যাপী গণসমাবেশের অংশ হিসেবে শনিবার রাজশাহী বিভাগের এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই সমাবেশ ঘিরে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ।