রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সব ভোট ব্যালটে: সিইসি

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনের সংকট ইভিএম নিয়ে নয়। এই সংকট আরও মোটাদাগের। এই সংকটের যদি ফয়সালা হয়, সব ভোট ব্যালটে হবে। রাজনৈতিকভাবে শতভাগ সমঝোতা যদি হয়, অসুবিধা নেই।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সিইসি নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

সিইসি বলেন, জাফর ইকবাল বলেছিলেন এটা খুব জটিল মেশিন নয়। ওই হিসেবে বলছেন যে এটা দুর্বল যন্ত্র। যন্ত্র দুর্বল কী সবল, এটা আমার বিবেচনা করার বিষয় নয়। সবল হওয়ারও দরকার নেই, দুর্বল হওয়ারও দরকার নেই। যন্ত্র কাজ করছে কিনা, এটাই আসল বিষয়। গত কয়েকবছর ধরে আমরা হাজারো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেছি। কোথাও আমাদের যন্ত্র ম্যালফাংশন করেছে, এমনটি ঘটেনি।

তিনি বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব, এই কথা তো প্রথম দিন থেকেই বলা হচ্ছে। যে ডিজিটাল জালিয়াতি হবে ভোট চুরির মেশিন। আমরা এটা নিরসন করার জন্য প্রচুর সময় নিয়েছি। সব দলকে প্রযুক্তিবিদ নিয়ে এসে যাচাই করে দেখতে বলেছি। আমরাও ওদের কথা আমলে নিয়ে পরীক্ষা করেছি। বাজারে যে কথা চালু রয়েছে, ডিজিটাল জালিয়াতির স্বপক্ষে আমরা কোনও প্রমাণ পাইনি। দলগুলো যদি নির্দিষ্ট না বলতে পারে, কীভাবে জালিয়াতি সম্ভব তাহলে তো হলো না। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাচ্ছি, ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব নয়। আমাদেরই প্রমাণ করতে হবে, ডিজিটালি জালিয়াতি সম্ভব নয়; এটা কিন্তু আইনগত ভাষা নয়।

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, যারা অভিযোগ করছেন তারাই আমাদের দেখিয়ে দেবেন লিখিত এবং মৌখিকভাবে যে কীভাবে জালিয়াতি সম্ভব। আজ অব্দি কোনও দল এই কথাটা বলেননি বা দেখাননি। কতগুলো দল এসেছিল, আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। পাঁচ-সাতটি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছে, কতগুলো দল শর্ত সাপেক্ষে বলেছে।

 

তিনি বলেন, ইভিএমের পক্ষে যারা বলেছেন তারা একেবারেই কম নয়। আমরা তাদের ভোটাভুটির জন্য ডাকিনি। মতামতের জন্য ডেকেছিলাম। আমরা সুবিধাগুলো তুলে ধরেছি। কারচুপি ও সহিংসতা নিঃসন্দেহে কমে যাবে। আমরা স্টাডি করেছি, ওখানে আমার ভোট আপনি, আপনার ভোট আমি দিতে পারবো না। ওখানে জোরাজুরি, সহিংসতা অনেকখানি কমে যাবে।

সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে কোনও সংকট দেখছি না। রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সংকট দেখছি তা ইভিএম নিয়ে নয়, আরও মোটাদাগের সংকট। আমরা আশাকরি এই সংকট কেটে যাবে। তার যদি ফয়সালা হয়, সব ভোট ব্যালটে হবে। রাজনৈতিকভাবে শতভাগ সমঝোতা যদি হয়, অসুবিধা নেই। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। সব দল নির্বাচনে আসছে, সেটা তো একটি ভাল উদ্যোগ। আমাদের জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হলো নির্বাচনটা হলো কিনা। ইভিএম নয়। নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বিঘ্ন হলো কিনা, সেটা ইভিএমে হলো নাকি ব্যালটে হলো- সেটা হওয়াটাই বড় কথা। কাজেই বড় ধরনের সংকট ওখানে নয়। ওই সংকটটা যদি নিরসন হয় নির্বাচনটা সুন্দরভাবে ওঠে আসতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অবস্থা আরও প্রকট হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না। আরেকটা জিনিস বলছেন, ভারতের তুলনা দেওয়া হচ্ছে। পেপার ট্রেইল যুক্ত করা। এটা যদি থাকে কে কাকে ভোট দিলো পরে দেখা যায়। ভারতের যতো নির্বাচন হয়েছে, ওই পেপার ট্রেইল দিয়ে কেউ এমপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, এমন নজির নেই। একটা হয়নি এমন। আমাদের দেশে যে ব্যালটে হয়েছে গত ৫০ বছরে আদালতে মামলা করে পুনঃগণনার পর সংসদের এসেছে এই তথ্য আছে কিনা? যদি না থাকে তাহলে এই একটা জিনিস নিয়ে আপনারা এতো উঠেপড়ে লাগলেন কেন? বিগত ৫০ বছরে কোনও নির্বাচনে দেখা গেছে কি? আমাদের দেশে কারচুপি হয়, তাহলে মামলা পর কেউ তো জয়ী হয়ে আসেনি। কাজেই নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করাটাই বড় কথা আস্থাভাজনভাবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা যদি ইভিএম তুলে দিই। আর যদি কারচুপি হয় আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি কেউ পরাজিত হয়ে মামলা করে পুনর্গণনা করে জয়ী হয়ে সংসদে আসতে পারবেন না। এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি। আমরা এটাকে আমলে নিয়েছি। ভারত কিন্তু বায়োমেট্রিক দিতে পারেনি আমাদের ইভিএমের মতো। ইউরোপের কথা বলা হচ্ছে। সেটা আমি জানি না, কী জন্য তুলে দিয়েছে ইভিএম। তবে ওদের যদি হাত তুলে ভোট দিতে বলেন, ওরা ভদ্রভাবে হাত তুলে ভোট দিয়ে চলে আসবেন। নির্বাচন নিয়ে ওখানে কারচুপি হয় না। ওদের ওখানে কোনও মেশিন বসাতে হয় না। কারণ ওদের ওখানে সভ্যতা ও নিয়মতান্ত্রিকতা এমন একটা পর্যায়ে এসেছে যে ইভিএম কী আর ব্যালট হলেই কী।