রাজনীতিতে না আসলে সাংবাদিকতা করতাম

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বাগেরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা শেখ সারহান নাসের তন্ময়। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসায় দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যেমন উজ্জীবিত তেমনি সাধারণ মানুষ উৎফুল্ল।

শেখ পরিবারের সদস্য হিসেবে তন্ময় নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তিনি যেখানে যাচ্ছেন দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে সবাই একনজর দেখার জন্য ভিড় করছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে শেখ তন্ময় সর্বকনিষ্ঠ।

সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য তন্ময় শুধু বাগেরহাটে নয়; সারাদেশে এখন আলোচিত নাম। তন্ময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও খুবই জনপ্রিয়।

প্রতিদিন নতুন নতুন ভিডিও ও ছবি আপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হন তিনি। রাজনীতিতে আসা, ভবিষ্যতে দেশ নিয়ে তার ভাবনা কী এসব বিষয় জানতে তার মুখোমুখি হন আমাদের প্রতিনিধি। দেশ ও রাজনীতি নিয়ে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের ভাবনার চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো;

হঠাৎ আপনার রাজনীতিতে আসার কারণ?

শেখ তন্ময়: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ উপলব্ধি করে বড় হয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় রাজনীতি করতে আগ্রহী হয়েছি। আমার ছোট ফুফু শেখ রেহানা রাজনীতিতে আসতে আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। বাবা শেখ হেলাল উদ্দীন দুই যুগ ধরে রাজনীতিতে আছেন। শৈশব থেকে পরিবারের মধ্যে দেখে আসা রাজনীতির চর্চা আমাকে রাজনীতিতে আসতে উদ্বুব্ধ করেছে। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর দলের মধ্যে একতা শক্তিশালী হয়েছে। আমি নিজে যে কোনোদিন রাজনীতিতে সক্রিয় হব, জড়িয়ে পড়ব বুঝতে পারিনি। রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এসে দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যি আনন্দিত। আমাকে পেয়ে তারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছেন। আমি যাতে বাগেরহাটের রাজনীতিতে সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারি এমনটা প্রত্যাশা করছেন ভোটাররা।

রাজনীতিতে যেটা হয় তাহলো নির্বাচন আসলে মানুষের মধ্যে একটা ভয়ভীতি কাজ করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি জোট বিজয়ের পর দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা, দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতনসহ জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে ঠিকমতো কাজ করতে দেয়া হয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ গত কয়েকটি নির্বাচনের থেকে অনেক ভালো। বর্তমান সরকার নির্বাচনের জন্য সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করেছেন। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা এই নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, জনসংযোগ করছেন। তাদের আমরা কোনো বাধা দিচ্ছি না।

এমপি নির্বাচিত হলে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

শেখ তন্ময়: আমি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ আমাকে বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য শেখ হাসিনা অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তিতে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা যাতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারেন সেজন্য আগামীতে প্রত্যেক জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সরকার আবার ক্ষমতায় গেলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে তরুণদের বেকারত্ব ঘোচাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় আমি কলাম লিখতাম। আমার উচ্চতর ডিগ্রি সাংবাদিকতার ওপর। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যম জাতির চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম।

গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের সবারই একটি দায়িত্ব আছে, আমি যদি ভুল করি তা ধরিয়ে দেয়া। ভালো কাজ জনগণের মাঝে তুলে ধরা। আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের কিছু মত পার্থক্য থাকতে পারে, বিরোধীদল আছে, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আছে। দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে বের করে নিয়ে এসে সুন্দর সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আমাকে দল এখানে মনোনয়ন দিয়েছে। আমার দায়িত্ব কীভাবে বাগেরহাটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং এখানকার মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। আমার এ পথচলায় ভুলত্রুটি হতে পারে, হবে। তাই আমি চাই আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। সরকারের নির্বাচিত জনপ্রনিধিরা বিগত দিনে যেমন ভালো কাজ করেছেন, আমিও নির্বাচিত হয়ে সেই সমস্ত ভালো কাজে নিজেকে যুক্ত করতে চাই। আমার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতির বাইরে এসে সাংবাদিকতা, খেলাধুলায় অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা বা ভালো সমাজ গড়তে যেসব গুণাবলি প্রয়োজন, হয়তো আমার নেই, আমি হয়তো রাজনীতি করি না বা মাঠে ভালো স্লোগান দিতে পারি না। তবে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চাই, রাজনীতিতে থেকে ভালো গুণাবলি অর্জন করতে চাই।

এক্ষেত্রে আপনি কাকে অনুসরণ করবেন? 

শেখ তন্ময়: আমার পরিবার থেকে শেখানো হয়েছে যে যা জানো তা দিয়ে তুমি তোমার দায়িত্ব পালন কর। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয়ভাবে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন আমার রাজনীতিতে আসা উচিত, তাই আমি রাজনীতিতে এসেছি। এক্ষেত্রে আমি আমার পরিবারের শিক্ষাকে অনুসরণ করব। রাজনীতিতে না আসলে হয়তো আমি সাংবাদিকতা করতাম অথবা ক্রিকেটার বা সংগীত শিল্পী হতাম। যেহেতু আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার ভুলত্রুটি হলে তা ধরিয়ে দেবেন।

আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাব। বাগেরহাটের মানুষ কীভাবে শান্তিতে থাকতে পারে, স্থানীয় জনগণ যেন তাদের উন্নয়ন বুঝে নিতে পারেন, সেজন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়ে সামনে এগোতে চাই। আপনারা বাগেরহাটের মানুষ, আপনারা জানেন এখানকার মানুষের কী প্রয়োজন, কী প্রয়োজন নেই। আমি নির্বাচনে জয়ী হই বা না হই আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আগামীতে এখানে থাকতে চাই।