রহস্যঘেরা মেয়র সাদিক আসলেন প্রকাশ্যে, অংশ নিলেন ভিডিও কন্সফারেন্সে

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

করোনা দূর্যোগ মুহূর্তে বরিশার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ কোথায় আছেন, তা নিয়ে প্রায় এক মাসকাল নানান জল্পকল্পনা ও ধ¤্রজালের অবশেষে অবসন ঘটলো। আজ রবিবার সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর টেলি-কনফারেন্স অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রায় ২৭ দিন পর তাকে প্রকাশ্যে দেকা গেলো এবং তাও কোন সরকারি অনুষ্ঠানে।

এর আগে অজ্ঞাত কারণে তার লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা এবং অপরাপর রাজনৈতিক দল ও প্রশাসানিক মহল করোনা ভাইরাস মুক্ত বরিশাল দেখা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে থাকায় এই নেতার অবস্থান ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সাথে তুমুল বিতর্ক চলছিলো করোনা ভাইরাস নিয়ে একজন নগর পিতার নিরব ভূমিকা কতটা বেমানান, সেই প্রশ্নবানে।
যদিও তার পক্ষ থেকে বরিশাল নগরীতে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে।

কিন্তু মেয়র সাদিক প্রকাশ্যে না আসায় এই বিতক আরোা জোড়ালো রূপ নেয়। আজ রবিবার সকালে বরিশাল প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সাংসদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর টেলি কনফারেন্স অনুষ্ঠানে রহস্যময় চারিত্রক বৈশিষ্টের তরুণ এই রাজনীতিবিদ অংশগ্রহণ কিছুটা হলেও তার অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা খুঁজে পাওয়া গেলো।

সকালে অনুষ্ঠিত বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে অংশ দিতে তাকে কালিবাড়ি সড়কের বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে। সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিনের সন্ধ্যা রাতে এই রাজনীতিবিদকে উৎফুল্লা দলীয় নেতাকর্মী ব্যাস্টিত অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের সম্মুখের মঞ্চে ভিন্ন ঢংয়ে দেখা গিয়েছিলো।

এরপর পর দিনেই করোনা ভাইরাস নিয়ে তাবদ দুনিয়া কেঁপে ওঠার সাথে সাথে গোটা দেশসহ বরিশালে আতঙ্ক-উদ্বেগ তৈরি হয়। যা আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রথম পদক্ষেপ গণসচেতনতা তৈরিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল সমূহ মাঠে নামতে দেখা গেছে।

নিজ নিজ আঙ্গিক থেকে সংশ্লিষ্ট মহল ব্যাপক প্রচারণা ও নিরাপত্তামূলক হেন্ড স্যানিটেসন বিতরণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণে অগ্রসর হয়। দ্বিতীয় ধাপে চলছে ত্রাণ বিতরণ তৎপরতা। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতা বা ইমেজ তৈরির প্রেক্ষাপট খুঁজতে দেখা যায়। একমাত্র বরিশাল জেলা ও নগর আ’লীগ এক্ষেতে নিরব ও নিস্ত্রিয়তায় নেতাকর্মীরা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় নানা মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম নেয়।

বিশেষ করে নগরবাসীর মাঝে ক্ষোদক্তির অবতারনা হয় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে। বর্তমান সময়ে মাঠে না থাকায় কারণই হচ্ছে বিতর্কের মূল ইস্যূ। কি কারণে তিনি অদৃশ্যে চলে গেলেন, এবং কোথায় আছেন তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। তার অবস্থান নিয়ে একরকম রহস্যের সৃষ্টি করে।

এ নিয়ে পরস্পর বিরোধী তথ্য পাওয়া যায়। তার নিকট অনুসারীরা যে দাবি করেছিল তা নিয়ে ভিন্নমত দেখা দেয়। কারো বক্তব্য ছিল, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনায় সতর্কতামূলক তিনি বরিশাল ক্লাবের একটি কক্ষে হোম-কোয়ারেন্টিনে আশ্রয়ের ন্যায় সেখানে অবস্থান করছেন। অপর পক্ষের দাবি ছিলো, তার নিজ বাড়িতে রয়েছেন।

আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের ভাষ্য ছিলো, সাদিক আব্দুল্লাহ তার গ্রামের বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামে সেরনিয়াবাত পরিবারের সাথে রয়েছেন। যে নেতা মাঠে থাকেন অগ্রভাগে, নানা অনুষ্ঠানাদিতে ব্যতিক্রম কিছু চমক দেখান, সেই সাদিক আবদুল্লাহ এই দূর্যোগে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়ায় বিষয়টি কোন মহলেই সহজভাবে নেয়নি।

সমালোচনার তীর ছুরে দেয় তার বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গির দিকে। তুমুল বিতর্কের মাঝে নিজ দল বা সেরনিয়াবাত পরিবারের পক্ষ থেকে তার অদৃশ্য থাকার বিষয়াদি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য বা তার অবস্থাগত কারণ ব্যাখ্যা না দেয়ায় রহস্যের ডালপালা আরো বিস্তৃতি ঘটে।

ধারণা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা প্রচার করে মেয়র সাদিক নিজ ঘরেই হোম-কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। কিন্তু কালিবাড়ি সড়কের নিজ বাড়িতে তাকে দেখেছেন, এমন অকট্য তথ্য প্রমাণাদি কেউ দিয়ে পারেনি। এ নিয়ে মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছিলো ‘মেয়র সাদিক কোথায়’?

একটি নির্ভরযোগ্য দল ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান শেষে করোনা ভাইরাস সংক্রমন আতঙ্ক এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বরিশাল ক্লাবে নিরিবিলি একাকি অবস্থান নিয়েছিলেন। দুই একজন ব্যতিত কেউ তার এই অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেছিলেন না। খোদ তার অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীরা বিস্মিত হয় নেতার অন্তর্ধানে।

এধরণের অদৃশ্য থাকার রহস্য নিয়ে বিতর্ককে আমলে না নিলেও মিডিয়ায় শিরোনাম হওয়ায় চার দিনের মাথায় নিরবে সাদিক আবদুল্লাহ কালিবাড়ি সড়কে বাসায় ফিরে আসেন। নিজগৃহে ফিরে আসলেও তিনি দেখা সাক্ষাত বন্ধ এবং কিভাবে আছেন তা নিয়ে বাড়ির কেয়ারটিকারও অজানা ভাব প্রকাশ করে। তার বাড়ির ভেতর ও বাহিরে সবসময় থাকা পুলিশি প্রটকল প্রত্যাহার করে নেয়ায় কেউ কেউ সন্দেহের চোঁখে দেখছিল এই ভেবে যে, তার পরিবারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেন কি না?

এসব বিতর্ক টপকে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দু:স্থ বা নিম্ন আয়ের মানুষকে অন্তত খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে ত্রাণ সহয়তা দেয়া শুরু করে। গত এক সপ্তাহ ধরে তার এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি কালিবাড়ি সড়কের বাসভবনে রয়েছেন। সেখানে ত্রাণ সহয়তা দিতে দিন-রাত কর্মরত অনুসারীরা ও তার নিকটতম রাজনৈতিক সহচর নিরব হোসেন টুটুল ব্যস্ত থাকায় সেই অনুমান আরো বদ্ধমূল হয়।

এছাড়া বেশ কয়েকটি সূত্র আভাস দেয় যে, মেয়র সাদিক গভীর রাতে ওয়ার্ড ভিত্তিক ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করতে নিজেই প্রায় উপস্থিত হন। কিন্তু এমনভাবে নিরাপত্তামূলক পোশাকে আবৃত ও মাথায় হেলমেট থাকায় অনেকেই আঁচ করতে পারেন না তার পাশেই নগর পিতা সেই সাদিক আবদুল্লাহ দন্ডয়মান রয়েছেন।

গত তিন দিন পূর্বে সরকারের সর্বচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয় আজ রবিবার সকালে করোনা দূর্যোগে বরিশাল পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে টেলি-কনফারেন্সে মতবিনিময় করবেন।
এ খবর মিডিয়ায় আগাম চলে আসায় রাজনীতিক ঘরোনায় তাকে দেখতে নতুন করে উৎসুক প্রশ্নে আগ্রহের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় এই অনুষ্ঠানে মেয়র সাদিক’র অংশগ্রহণ নিয়ে।

অধিকাংশের মন্তব্য বয়সে তরুণ হলেও রাজনীতিতে কণ্ঠকময় পথ পাড়ি দিয়ে স্বল্পসময়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো সাদিক আবদুল্লাহ অন্তত প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বাহিরে তিনি থাকবেন না, আজ রবিবার সকালে তিনি ঠিকই প্রকাশ্যে আসছেন।
সেই ধারণাই সত্য হলো, ঘটলোই তাই।

সকালেই দেখা গেছে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ নিজ বাসা থেকে বেশ কয়েকজন অনুসারী নিয়ে গাড়িতে চেপে বেরিয়ে আসলেন। তার এই আত্মপ্রকাশ যেনো কালো মেঘে ঢেকে থাকা আকাশে হঠাৎ ঝালকানো তাঁরার অববয় নতুন এক সাদিক আবদুল্লাহকে দেখা গেলো।

হাস্যোজ্জ্বল এই নেতা গাড়ি থেকে নেমেই সরাসরি বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে টেলি-কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে উপস্থিত থাকা একটি সূত্র জানায়, এই অনুষ্ঠানে মেয়র আসছেন তা আগেভাগেই জানানো হয়েছিল। টেলি-কনফারেন্সে বরিশালে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ খবরাখবর জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন। ওই সূত্র জানায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রথম কথা উপস্থাপন করেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান ও মেট্রোপুলিশ কমিশানর মো. শাহাবুদ্দিন খান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের করোনা দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ সমূহের খবর তার কাছে রয়েছে জানিয়ে কিছুটা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এরপর আগামীর করোনিয় দিক সমূহ নির্দেশনা দেন। এক পর্যায়ে কিছুটা কঠোর ভাষায় সতর্ক করেন এই দূর্যোগ মুহূর্তে কারো টালবাহানা তিনি সহ্য করবেন না।

স্বাস্থ্যসেবা খাতের দিকে নজর দেয়ার পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী অথবা নির্ধারিত ১০ টাকা ধরে সরকারি চাল লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নেয়ার তাগিদ রাখেন। পাশাপাশি সর্ব সাধারণকে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে নিরাপদে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন।

দীর্ঘ প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছি সময় প্রধানমন্ত্রীর এই টেলি-কনফারেন্সে বিভাগীয় কমিশনার মো. ইয়ামিন চৌধুরী, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, র‌্যাব-৮ এর পরিচালক আতিকা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ আসনের আ’লীগের দলীয় সাংসদ পঙ্কজ নাথ, বানারীপাড়া-উজিরপুরের সাংসদ শাহে আলম এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

ওই সূত্রটি নিশ্চিত করে, টেলি-কনফারেন্সে উপস্থিত অপরাপর কর্মকর্তা এবং সাংসদরা দুই একটি বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় করলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মেয়র সাদিক, তার ভূমিকা ছিল নিরব। ভাবসাবে ধারণা করা হচ্ছিল তিনি কিছু একটা অনুধাবন করছেন, যা পরে বাস্তবায়ন করে চমক দেখাবেন। এধরণের অতীত উদাহরণ রয়েছে।

দূর্যোগ প্রাক্কালে এই টেলি-কনফারেন্স বরিশাল প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্ববহন করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক-নির্দেশনা এসেছে, যা বাস্তবায়নে করোনা দূর্যোগ প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশাবাদ ব্যক্ত করতে শোনা গেছে ।

এদিকে সকালে টেলি-কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে মেয়র সাদিকের ভূমিকা কেমন হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আগ্রহের সৃষ্টি করে। তার চেয়ে বেশি পুলকিত হয় এই নেতার অন্তর্ধান রহস্যের অবসন ঘটায়। রাজনৈতিক মহলে এখন ঘুরে ফিরে আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে, সাদিক আবদুল্লাহ আসলেই রহস্যময় রাজনৈতিক পুরুষ

যেমনটি ঝাকরা চুলের অধিকারী এবং শশ্রুমন্ডিত জাসদের প্রবীণ নেতা সিরাউল ইসলাম খান। এই নেতা রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও দেশীয় অঙ্গনে তাকে রহস্যঘেরা রাজনীতিবিদ হিসেবে কিংবদন্তি নেতা সমতুল্য ভাবা হয়। এখন সেখানে যুক্ত হলো আরেকটি নাম বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ।