রয়ের বীরত্বগাথার পর ম‌্যাড়ম‌্যাড়ে ব‌্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হাতছাড়া

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

একপাশে জেসন রয়ের বীরত্বগাথা, আরেক পাশে তামিম ইকবালের ম‌্যাড়ম‌্যাড়ে ব‌্যাটিংয়ের চিত্র দ্বিতীয় ওয়ানডের আদ‌্যোপান্ত বলে দিতে যথেষ্ট। দুজনই নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন দুজনই। কিন্তু রয় বিরুদ্ধ কন্ডিশনে প্রতি আক্রমণে গিয়ে প্রতিপক্ষকে নাড়িয়ে দেন। তামিম চেনা কন্ডিশনে মুখ থুবড়ে পড়েন।

দুজনই দুই দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু তাদের দুই মেরুর পারফরম‌্যান্স গড়ে দেয় ব‌্যবধান। রয়ের ১২৪ বলে ১৩২ রানের ইনিংসে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩২৬ রানের বিশাল পুঁজি পায় ইংল‌্যান্ড। জবাবে তামিমের ৬৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস গোটা দলের চিত্র এঁকে দেয়। ১৯৪ রানে অলআউট হয়ে ১৩২ রানের হারে ২০১৬ সালের পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারল বাংলাদেশ।

 

শেষবার এই ইংল‌্যান্ডের কাছেই ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার তৃতীয় ওয়ানডেতে গিয়ে সিরিজের ফয়সালা হলেও এবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই সিরিজ ইংল‌্যান্ডের ঘরে।

টস হেরে ব‌্যাটিং করতে নেমে শতরানের আগে ৩ উইকেট হারায় ইংল‌্যান্ড। উইকেট ব‌্যাটিংয়ের জন‌্য সহজ ছিল না। বল ঘুরছিল। থেমে আসছিল। সুযোগটি লুফে নিয়ে ফিল সল্ট (৭), ডেভিড মালান (১১) ও জেমস ভিঞ্চের (৫) উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু রয় আরেক প্রান্তে কড়া শাসন করেন। ২১ ওভারে ইংল্যান্ডের দলীয় রান যখন শতক ছুঁয়েছিল তখন রয়ের একার রানই ছিল ৬৭।

প্রাণবন্ত ব‌্যাটিংয়ে, প্রায় একশর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ১০৪ বলে রয় তুলে নেন তার ওয়ানডে ক‌্যারিয়ারের দ্বাদশ শতক। মাইলফলক ছোঁয়ার পর পাঁচ বল রয়ে-সয়ে ছিলেন ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান। পরের ১৪ বলে ছয়টি চার আসে তার ব‌্যাট থেকে।

বিবর্ণ বোলিংয়ের সঙ্গে ছিল ঢিলেঢালা ফিল্ডিং। তাতে রান চাকা ঘুরতে থাকে অনায়েসে। চতুর্থ উইকেটে তার সঙ্গে হাত খুলে মারা জস বাটলারকে থামানোর উত্তরও জানা ছিল না কারও। দুজনের শতরানের জুটি আসে কেবল ৮৫ বলে।

রয় উইকেটের চারিদিকে বাউন্ডারি ফোয়ারা ছুটিয়ে উড়ছিলেন। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ১৫৩ রানের ইনিংসকেও ছাড়িয়ে যাবেন। কিন্তু ওতোটুকু আর যেতে পারেননি। তাকে থামান সাকিব। বাঁহাতি স্পিনারের বল সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ১৩২ রানে। ১২৪ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ১৮ চার ও ১ ছক্কা।

কিন্তু বাটলার ছিলেন অনবদ‌্য। ৫০ বলে ৫০ রান তোলার পর আগ্রাসী ব‌্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে ভয় দেখানো শুরু করেন। সাকিবকে পয়েন্ট ও কাভারের মাঝ দিয়ে পাঞ্চ করে যে চারটি মেরেছিলেন তা নিশ্চিতভাবেই ম‌্যাচের সেরা শটের একটি। ৪৪তম ওভারে মিরাজকে পরপর দুটি ছক্কা উড়ান লং অন দিয়ে। প্রথমটা ডাউন দ‌্য উইকেটে এসে। পরেরটা জায়গায় দাঁড়িয়ে। মিরাজ অবশ‌্য তৃতীয় বলে প্রতিশোধ নেন। এবার লেন্থ বল উড়াতে গিয়ে ফিরতি ক‌্যাচ দেন। বল সরাসরি মিরাজের হাতে। সেখানে থেমে যায় ইংলিশ অধিনায়কের ৬৪ বলে ৭৬ রানের ইনিংস।

দ্রুত বাটলার, জ‌্যাকসের উইকেট নিয়ে মনে হচ্ছিল ইংল‌্যান্ডকে তিনশর নিচে আটকে রাখা যাবে। কিন্তু মঈন আলী ও স্যাম কুরানের ঝড় যে তখনও বাকি ছিল। ২৪ বলে তাদের ৩৯ রানে ইংল‌্যান্ডের রান তিন’শ পেরিয়ে অনেক দূর চলে যায়। মঈন আলী ৪২, কুরান ৩৩ রান করেন।

তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা হলেও রান খরচ করেছেন ৬৬। এছাড়া মিরাজ ৭৩ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন। বাকিরা কেউই ওভারপ্রতি রান পাঁচের নিচে রাখতে পারেননি। বাজে বোলিংয়ের দিনে বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ছিল আলগা। ক‌্যাচ না ছাড়লেও গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে তেজ ছিল না। হাতের উপরের বলেও অনায়েসে সিঙ্গেল বেরিয়েছে। ব‌্যাটসম‌্যানরা এক রানকে দুই রান বানিয়েছেন সহজে। তাতে বোলাররা চাপে রাখতে পারেননি ব‌্যাটসম‌্যানদের।

ইংল‌্যান্ডের ইনিংসে ১৩৫ ডট বল হলেও বাউন্ডারির মিছিল লেগেছিল। ৩০ চার ও ৮ ছক্কা সেই কথাই বলছে।

নিজেদের মাঠে ৩০০ বলে ৩২৭ রানের লক্ষ‌্য বড় কিছু নয় নিশ্চয়ই। তবে বাংলাদেশের ভয় ছিল ইংল‌্যান্ডের দ্রুত গতির পেসারদের নিয়ে। সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে। জফরা আর্চারের পরিবর্তে দলে আসা স‌্যাম কুরান নিজের প্রথম দুই ওভারেই বাংলাদেশকে ব‌্যাকফুটে ঠেলে দেন। বাঁহাতি পেসার লিটনকে পয়েন্টে তালুবন্দি করানোর পর শান্তকে উইকেটের পেছনে ক‌্যাচ দিয়ে আউট করেন। দুজনই পেয়েছেন গোল্ডেন ডাক। হ‌্যাটট্রিক বল মুশফিক সামলে নিলেও পরের ওভারে কুরানের লাফিয়ে উঠা বলে খোঁচা দিয়ে মুশফিকও ফেরেন ড্রেসিংরুমে।

এরপর শুরু হয় তামিম ও সাকিবের প্রতিরোধ। দুজনের ১১১ বলে ৭৯ রানের জুটি ধাক্কা সামলে নিলেও জেতানোর মতো ছিল না। সাকিব সুযোগ সৃষ্টি করে দ্রুত রান তুললেও তামিমের মধ‌্যে লড়াইয়ের কোনো তাড়ণাই ছিল না। ধীর গতির ব‌্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের আরও সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছিলেন। তাতে চাপ বাড়ছিল সাকিবের ওপর।

প্রথম ৩৩ বলে ২৪ রান করা তামিম পরের ১১ রান করেন ৩২ বলে। খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে মঈন আলীর বলে ডাউন দ‌্য উইকেটে এসে ছক্কা উড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লং অফে আটকে যান ভিঞ্চের হাতে। সাকিব আরেকপ্রান্তে লড়াই চালিয়ে ফিফটি তুলে নিলেও তার ব‌্যাট বেশিদূর যায়নি। ৬৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৮ রান করেন বাঁহাতি ব‌্যাটসম‌্যান।

তার আউটের পরপরই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়ে বাংলাদেশের হার। মাহমুদউল্লাহর ৪৯ বলে ৩২, আফিফের ৩৩ বলে ২৩ রান ও তাসকিনের ২১ বলে ২১ রানের ইনিংস পরাজয়ের ব‌্যবধান কমিয়েছে মাত্র।

দলে ফেরা বাঁহাতি পেসার স‌্যাম কুরান ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। আদীল রশিদের পকেটেও গেছে ৪ উইকেট। তিনি ৪৫ রানের বিনিময়ে নেন উইকেটগুলো।

২০১৫ সালের পর ঘরের মাঠে টানা দুই ওয়ানডে হারেনি কখনো। ইংল‌্যান্ড সেই ধাক্কাটাই দিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। সামনেই চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডে। চট্টগ্রামে বিজয়ের পতাকা উড়াতে না পারলে ঘরের মাঠে ২০১৪ সালের পর আবার হোয়াইটওয়াশ হতে হবে বাংলাদেশকে। শেষবার ভারতই বাংলাদেশকে ২-০ ব‌্যবধানে হারিয়েছিল। সেটা ছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যোগদানের পর প্রথম সিরিজ। দ্বিতীয়বার তার শুরুটা একইভাবে হয় কিনা সেটাই দেখার।