রমজানে ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

আজ রোববার। পবিত্র মাহে রমজানের ১৭তম দিন। আর মাগফিরাতের সপ্তম দিন। রমজান মাস সংযমের মাস। এ মাসে বান্দা নির্বিঘ্নে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে থাকে, দান-সদকা করে, জাকাত আদায় করে, দুস্থ-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের সেবায় এগিয়ে আসে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য হলো এই যে, রমজান এলেই বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বান্দার সেসব সেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজ অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। বিশে^র অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ১১ মাস ব্যবসা করলেও রমজান মাসে মানুষের সেবা করেন; পক্ষান্তরে আমাদের দেশে দেখা যায় পুরো ভিন্ন চিত্র। ১১ মাস জিনিসের দাম যেমন থাকে রমজানে তার দ্বিগুণ বা তিন গুণ হয়ে যায়।

এ মাসে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে একশ্রেণির মজুদদার, মুনাফাখোর, অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্য মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারমূল্য বাড়িয়ে দেয়। সংযমের মাসে তারা হয়ে ওঠে অসংযমী। এজন্যই ইসলাম মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বাজারব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য মজুদদারি, অত্যধিক মুনাফাখোরি ও প্রতারণা নিষিদ্ধ করেছে। অধিক মুনাফার আশায় পণ্য মজুদ করাকে ইসলাম অবৈধ ঘোষণা করেছে। হানাফি মাজহাবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করা মাকরুহ তাহরিমি (হারাম পর্যায়ের)। অন্যান্য মাজহাবে এটি হারাম। কেননা এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে পায় এবং বহু মানুষ দুর্ভোগে পতিত হয়। তাই তো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গুদামজাত করে রাখবে সে আল্লাহর হেফাজত হতে বেরিয়ে যাবে। আর আল্লাহ তার ওপর থেকে তার দায়িত্ব তুলে নেবেন’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ৪৮৮০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং-২০৭৬৯)।

সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সম্পদশালী হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। এ সম্পদে তার কোনো বরকত হবে না। বরং দুনিয়াতেই এ সম্পদ তার জন্য অভিশাপ হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্যতা দ্বারা শাস্তি দেবেন’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২১৫৫)। মজুদদারি না করে সৎ নিয়তে ব্যবসা করা ইবাদত। এমন ব্যক্তির উপার্জনে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করেন। তাকে অপ্রত্যাশিত রিজিক দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদকারী অভিশপ্ত হয়’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২১৫৩)।

এ কারণে মুসলিম ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করে হলেও রমজানুল মোবারকে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা। এতে যেমন মুসলমানদের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হবে; তেমনি মানবসেবারও সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে মানবসেবায় এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।