রংপুর-রাজশাহী-খুলনায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

রেকর্ড পতনের পর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলেও গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া ও চূয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিদ্যমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে অব্যাহত থাকতে পারে আরো দুইএকদিন। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। তাছাড়া চলতি মাসে আরো অন্তত একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া তেতুলিয়ায় ৫ দশমিক ২, নওগাঁর বদলগাছিতে ৫ দশমিক ২, চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ২, যশোরে ৫ দশমিক ৪ ও গোপালগঞ্জে ৬ ডিগ্রি সেলিসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল। উল্লেখ্য, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি ও ৬ ডিগ্রির নীচে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭।

শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণের কিছু জেলায় শীতের তীব্রতা এতো বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে কুয়াশা ঝরছে বৃষ্টির মতো। টিনের চালে কুয়াশার পতন বৃষ্টির শব্দের মতোই শোনাচ্ছে। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশায় যানবাহন, নৌ ও বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক জায়গা থেকে খেতের ফসল নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাজে যেতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ। শীতের যথাযথ কাপড় না থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা এখন আগুনের কুন্ডলী।

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর জানান, দিনাজপুরে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি   সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রার সামান্য বেড়ে যাওয়ার কোন প্রভাব পড়েনি জীবনযাত্রায়। মানুষ এখনো বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বিপদে আছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। তবে গোটা জেলা কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে। সকাল ৬টায় তেতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সকাল ৯টায় ৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চলমান শৈত্যপ্রবাহকে এখানকার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখছে। শীতের প্রকোপে গ্রাম শহর সব এলাকার মানুষ বিপাকে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। হাঁড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খড়খুটো জ্বালিয়ে মানুষ ঠান্ডার কবল থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর বেলা সুর্যের দেখা মিললেও তাতে কোন উত্তাপ না থাকায় শীতের প্রকোপ কমছে না। এদিকে তীব্র ঠান্ডার সঙ্গে কুয়াশার প্রকোপও বেড়ে গেছে। ফলে শস্যে ক্ষেতের ফুল ঝরে পড়ছে এবং শীতের সবজিতে ছত্রাক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। কুয়াশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার আগেই নদী পথে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ জেলার ৪টি উপজেলার ১২০টি চরাঞ্চলের মানুষ যাতায়তে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, সন্ধ্যার পরপরই কুয়াশার চাদরে বন্দী হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে নিয়ন্ত্রিত গতিতে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টায় রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। গত কয়েক দিনের শীতে কারণে জবুথুবু হয়ে পড়েছে মানুষ। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত তিনদিনে প্রায় দুই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্য গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। এদিকে, বোরো ধানের রোপনকৃত চারা লালচে রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।