রংপুর থেকে সরকারিভাবে ৫ হাজার শ্রমিক ধান কাটতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

নভেল করোনা ভাইরাস আতঙ্ক উপেক্ষা করে রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কৃষি শ্রমিক ধান কাটতে যাচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে গতকাল রবিবার (১৯ এপ্রিল) গঙ্গাচড়া উপজেলা থেকে ৮০ জন কৃষি শ্রমিক কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বাসযোগে সরকারিভাবে পাঠানো হয়েছে।

ইতিমধ্যে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারি খরচে বাসযোগে তারা সেখানে যাচ্ছেন বলে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ আলী জানান।

রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। প্রতি বছর ধান কাটা মৌসুমে হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যায় ধান কাটতে। রংপুর অঞ্চলে বোরো ধান কাটতে আরও অন্তত ২৫ দিন সময় প্রয়োজন। দক্ষিণাঞ্চলে ধান ইতিমধ্যে পেকে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা মাড়াই করা যাচ্ছে না। এবার করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এবং সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ থাকাসহ বিভিন্ন কারণে রংপুর থেকে কৃষি শ্রমিকরা যেতে পারছে না। এমনি অবস্থায় কৃষি শ্রমিক সংকট দূর করতে এবং কৃষি শ্রমিকদের দক্ষিণাঞ্চলে পাঠাতে কৃষি মন্ত্রণালয় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গত শনিবার কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক রংপুর থেকে জরুরি ভিত্তিতে কৃষি শ্রমিক পাঠাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং তাদের উৎসাহিত করে সরকারি খরচে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী নিজেই রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আশরাফ আলীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন ও তাদের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দূর করতে রংপুর থেকে দ্রুত কৃষি শ্রমিক পাঠানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সে কারণে কৃষি শ্রমিকদের করোনার মধ্যেও উদ্বুদ্ধ করতে নানানমুখী উদ্যোগ নেয়েছে রংপুর কৃষি বিভাগ হয়েছে। যারা যেতে রাজি হয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সনদপত্র সিভিল সার্জেন দফতর থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যারা যাবেন তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য বাস ভাড়া করা হচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের যাওয়ার জন্য কোন খরচ বহন করতে হবে না। সরকারি খরচে তাদের স্ব স্ব জেলা উপজেলায় পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রংপুর থেকে কৃষি শ্রমিক পাঠানোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রংপুরে প্রায় দুই লাখেরও বেশি কৃষি শ্রমিক আছে যাদের অনেকেই প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাসহ হাওর অঞ্চলে যায় ধান কাটতে। সেখানে তাদের মজুরি বেশি পাওয়ায় তারা প্রতিবছরই যায়। কিন্তু এবার করোনার কারণে কৃষি শ্রমিকরাও আতঙ্কিত। তারপরেও তাদের সঙ্গে কথা বলে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তারা কর্মহীন আর রংপুরে ধান কাটা মাড়াই আরও ১৫-২৫ দিন সময় লাগবে। কারণ রংপুরে আলু উত্তোলন করার পরেই ধানের চারা রোপণ করায় দেরিতে ধান পাকে।

তিনি জানান, গতকাল রবিবার জেলার গঙ্গাচড়া থেকে ৮০ জন কৃষি শ্রমিক কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। তাদের যাবার জন্য বাস ভাড়া করা হয়েছে। জ্বালানিসহ যাবতীয় খরচ আমরাই বহন করব। সেই সঙ্গে যারাই যেতে চান তাদের সরকারি খরচে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।