যোগ্যরা উপেক্ষিত, তলানিতে দেশের ফুটবল, দায় কার?

:
: ৩ সপ্তাহ আগে

ম্যাচ কেমন দেখলেন? কাজী মো. সালাউদ্দিনের এক কথায় জবাব, ‘দুঃখজনক’। বাফুফে সভাপতি বিস্তারিত আর কিছু বললেন না। কেন দুঃখজনক? ম্যাচের কোনা দিকগুলোতে আপনি বেশি কষ্ট পেয়েছেন? ‌’এ টু জেড। কোনো কিছুই ভালো লাগেনি’-আগের রাতে কাতারের দোহার খলিফা ইন্টারন্যাশাল স্টেডিয়ামে হওয়া বাংলাদেশ ও লেবাননের ম্যাচের আলোচনা আর বাড়াতে আগ্রহী মনে হলো না কিংবদন্তি এই ফুটবলারকে। মুখাবয়ব বলছিল, চরম হতাশ তিনি।

কেবল কাজী সালাউদ্দিনই নন, লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচ দেখা সবাই হতাশ। দেশের ফুটবলারদের বাজার দর যতই চড়া হোক, আন্তর্জাতিক ময়দান থেকে তারা দেশকে কিছু দিতে পারছেন না। এটা চরম হতাশার।

 

নিত্য নতুন জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া খেলোয়াড় বাড়ছে, তাতে বাড়ছে তাদের মূল্য। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সারা বছর সাইডলাইনে বসে থাকা খেলোয়াড়রা জায়গা পান জাতীয় দলে। পারফরম করা অনেকেই থেকে যান আড়ালে। এভাবেই চলছে জাতীয় দল। যার ফল লেবাননের কাছে ৪ গোলের হার।

গোলের হিসাব করলে তা তো আরো হতাশার। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ৬টি। শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলয়ার কাছে ৭-০ গোলের হার দিয়ে। শেষ লেবাননের কাছে ৪ গোল খেয়ে। মাঝের চার ম্যাচের ফল লেবানন ১-১, ফিলিস্তিন ৫-০ ও ১-০ এবং অস্ট্রেলিয়া ২-০। ১৯ গোল খেয়ে একটি দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে পয়েন্ট মাত্র ১। গ্রুপে চার দলে চতুর্থ হয়ে বিদায়।

 

গতকাল ম্যাচের পর বাংলাদেশ কোচ একটি ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, সবাই মিলে খেলোয়াড়দের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কেবল এতটুকুই বলেননি, মাঠে কেন এমন ধস, তাও বলেছেন। শুরুর দিকে পেনাল্টিতে গোল হজম করায় নাকি সব জটিলতা তৈরি হয়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিরতির আগে দ্বিতীয় গোল খেলে আবার ধাক্কা পান। এরপর লেবাননের বিপক্ষে লড়াই করা তার দলের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আসলে বাংলাদেশ কোচ ম্যাচটা ঠিকমতো রিডই করতে পারেননি। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা না দিয়ে জিতবেন বলে গলা ফাটিয়েছেন আগের দিন। তবে ম্যাচের পর তার ভিডিওবার্তায় বক্তব্য ছিল নরম সুরে। এমন হারের পর কারইবা গলা উঁচু থাকে?

কাতার প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি দর্শক মাঠে গিয়েছিলেন। গ্যালারিতে বসে তারা গলা ফাটিয়ে দলকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে তারা হতাশ হয়েছেন। এতে অবশ্য খেলোয়াড়দের কিছু যায় আসে না। হয়তো হোটেলে ফিরেই তারা ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেছেন ঢাকায় ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন মৌসুমের দর কষাকষি নিয়ে।

 

অনেক সাবেক ফুটবলার কোচের দলগঠন প্রক্রিয়াকেই দাঁড় করাচ্ছেন কাঠগড়ায়। কারণ, ক্যাবরেরা কখন কাকে দলে ডাকবেন, কখন কাকে খেলাবেন কেউ জানেন না। লিগে ক্লাবেই খেলার সুযোগ হয় না, সেই খেলোয়াড় গায়ে জড়ান লাল-সবুজ জার্সি। লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশের রক্ষণ কৌশল দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। রক্ষণে কার কি দায়িত্ব ছিল তা যেন মাঠে দাঁড়িয়ে ভুলেই গিয়েছিলেন সবাই।

৬ জুন ঢাকায় ভেজা আর ভারি মাঠ বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ২ গোলে আটকিয়ে রেখে বাহবা কুড়িয়েছিলেন কোচ। কিন্তু কাতারের গতিময় মাঠে সেই সুযোগ ছিল না। ঘরে নিজেদের মতো করে মাঠ বানিয়ে একটু ভালো ফলাফল করলেও দেশের বাইরে গিয়ে আর পারে না। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে দেশের ফুটবল। খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোচের ক্লাবপ্রীতি নিয়েও অভিযোগ অনেকের।

মোহামেডানের তিনটি রানার্সআপ ট্রফি এনে দেওয়ায় যে খেলোয়াড়দের বড় ভূমিকা তাদের চোখেই পড়েনি কোচের। অথচ অবনমন হওয়া দলের খেলোয়াড় ডাকা হয়। জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার ও মোহামেডান ফুটবল দলের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব বললেন, ‘মোহামেডান যে তিনটি টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হলো তা কি এমনিতেই? আমাদের দলের যেসব ফুটবলার পুরো মৌসুম দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলো তাদের ডাকা হলো না। অন্য ক্লাবের যারা বেশিরভাগ সময় বেঞ্চে সময় কাটালেন, চোটে পড়ে থাকলেন তাদের নিয়ে কোচ জাতীয় দলে খেলিয়ে দিচ্ছেন। কোচের তো কোনো সমস্যা নেই। তিনি মোটা বেতন ঠিকই পাচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে দেশের ফুটবলের। ডুবছে জাতীয় দল।’

 

লেবানন ৬৪ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে। ঠিক আছে। এই দলের বিপক্ষেই তো গত সাফে ২-০ গোলে হেরেছে। ঢাকায় এই বাছাইয়ের হোম ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র করেছে। তাহলে এখন ৪ গোল হজম করে মাঠ ছাড়া কেন? লেবাননের খেলোয়াড়রা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকেছেন আর টপটপ গোল করেছেন।

আমাদের ‘তারকা’ খেলোয়াড়দের সামনে থেকে বল নিয়ে গোল করে ফেলেছেন তারা। অথচ এই ফুটবলাররাই দলবদলে কোটি টাকা দাম হাঁকান। সেটা তারা হাঁকাতেই পারেন। কোটি টাকা পাচ্ছেনও। আরো পাক। সমস্যা নেই। কিন্তু দেশের জন্য কিছু তো করতে হবে। বিদেশে নিয়ে ট্রেনিং করানো, পাঁচ তারকা হোটেলে রেখে ক্যাম্প, বিদেশি কোচিং স্টাফ-কত কি? আধুনিক ফুটবলে এসব দরকার আছে বলেই বাফুফে সব ব্যবস্থা করছে। কিন্তু মাঠে তো তার ছিঁটেফোঁটাও দিতে পারছেন না ফুটবলাররা।