ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্য সরকার গঠনের স্বপ্নে বিভোর ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি শিবির। জয়ের ব্যাপারে শুধু বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা নয়, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-আরএসএস পরিবারও অনেকটা নিশ্চিত ছিল। তবে উল্টে গেছে হিসেব-নিকেশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির।
ভোটের অপ্রত্যাশিত ফলাফল নিয়ে এখন বিজেপির কেন্দ্রে ও রাজ্যের অন্দরমহলে চলছে সমালোচনা ও বিশ্লেষণ। রাজ্য নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করলেও কেন্দ্র স্পষ্টত চুপ। তবে অন্দরের বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে পরাজয়ে পাঁচটি কারণ দাঁড় করিয়েছে রাজ্য বিজেপির নেতারা।
বিজেপির হারের পেছনে যে পাঁচ কারণ
>মুখমন্ত্রী কে হবেন সেই বিষয়টি জনগণের সামনে খোলাসা করতে ব্যর্থ হওয়া। অর্থাৎ শীর্ষ পদে মুখের অভাব। রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচার পর্বে অনেক পরিশ্রম করলেও কোনো মুখ তুলে ধরতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বারবার বাংলার ‘ভূমিপুত্র’-ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে জানালেও আলাদা করে কারও নাম বলেননি। অথচ তৃণমূলের মুখ ছিলেন ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা লড়াকু নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলার মেয়ে মমতা ব্যানার্জি।
>বাংলার কোনো নেতাকে মুখ হিসেবে তুলে না ধরার জন্য নীলবাড়ির লড়াইয়ে বড় বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতদের ওপরে। আর সেই নির্ভরতাকে ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রাথমিকভাবে মনে করছে, মমতা ব্যানার্জিসহ তৃণমূলের এই আক্রমণকেই সমর্থন দিয়েছে বাংলার মানুষ।
>রাজ্য বিজেপি আরও একটি কারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের বক্তব্য, ২০১৬ সালে বিজেপি রাজ্যে মাত্র ৩টি আসনে জিতেছিল। সেখান থেকে একেবারে ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল, তা দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। লোকসভা নির্বাচনের ফলকে বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেয়া ঠিক হয়নি। তাই এই হারকে বড় মনে হচ্ছে।
>মেরুকরণকে হাতিয়ার করে নীলবাড়ির লড়াইয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। প্রচার পর্বে অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলতে কড়া ভাষা প্রয়োগ করেছেন নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে- এর ফলে মুসলিম ভোট তৃণমূলের পক্ষে একাট্টা হলেও হিন্দু ভোটের সিংহভাগও তারা নিজেদের ঝুলিতে টানতে পারেনি।
>বিজেপি-তে আদি ও নব্য (ত্যাগী ও হাইব্রিড) বিবাদ অনেক দিনের। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই অভিযোগ নিয়ে দলের মধ্যে অনেক গোলযোগ হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল থেকে যারা এসেছেন তাদের প্রাধান্য দেয়া দলের কর্মী, সমর্থক এবং ভোটটাররা ভাল চোখে নেয়নি বলেই মনে করছে নেতারা। একইসঙ্গে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য- রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল।