ভালোবাসার দ্বীপ। নাম থাউজ্যান্ড আইল্যান্ড। এর আবিষ্কারক ফ্রান্সের স্যামুয়েল ডি চামপ্লেইন। ১৬০০ সালে।
দ্বীপটির অবস্থান কানাডার ওনটেরিও লেক ও সেন্ট লরেন্স নদীর মাঝামাঝি। এ নদীর মাঝে রয়েছে ছোট ছোট অজস্র দ্বীপ। এদেরই একত্রে নাম দেওয়া থাউজ্যান্ড আইল্যান্ড।
নাম থাউজ্যান্ড আইল্যান্ড হলেও এখানে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ দ্বীপ। জানা গেছে, এগুলো একসময় ইন্ডিয়ান নানা উপজাতির দখলে ছিল। তারা বড় বড় ঘরে বাস করত। দ্বীপে শস্য ফলাত। জীবিকার জন্য নদীতে মাছ, বনে পশু শিকার করত।
থাউজ্যান্ড আইল্যান্ডে একটি দ্বীপ হল হার্ট আইল্যান্ড। দেখতেও হৃদয় আকৃতির। এ দ্বীপটি ১৮৯৫ সালে কিনে নেন জর্জ বোল্ট নামের এক তরুণ জার্মান ইমিগ্র্যান্ট। জর্জ ছেলেবেলায় জার্মানির রাইনল্যান্ড ক্যাসেলটি দেখে অভিভূত হয়েছিলেন।
জর্জ হার্ট আইলান্ডে সে রকমই একটি ক্যাসেল তৈরি করে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অত্যন্ত আকর্ষণীয় নকশায় নিখুঁত পরিকল্পনায় তৈরি হওয়ায় এই মনোরম দুর্গটি সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
দ্বীপটিতে একটি প্রাসাদদুর্গও রয়েছে- দেখতে ছবির মতো। এর নাম বোল্ট ক্যাসেল।
সাড়ে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ১২০ কক্ষের অনন্য প্রাসাদসহ আরও ১১টি ভবন নির্মাণ যখন শেষ পর্যায়ে- তখন ১৯০৪ সালে বোল্টের কাছ থেকে নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারের কাছে টেলিগ্রাফ এলো, ‘ক্যাসেল নির্মাণের যাবতীয় কাজ বন্ধ করে দাও, মিসেস বোল্ট আর নেই।’ সারা পৃথিবীর বিখ্যাত ৩০০ কারুশিল্পী ও মিস্ত্রি যারা এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন- তারা হাতুড়ি-শাবল আর সরঞ্জামাদি ফেলে চলে গেলেন নিজ নিজ দেশে।
ক্যাসেলটির নির্মাণ কাজ শেষ হল না- আর কোনোদিনও শেষ হবে না। এখন এই ক্যাসেলটি দেখাশোনা করে অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে শুধু নির্মাণকর্মীরা যে অবস্থায় ক্যাসেলটি ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন, ঠিক সে অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
জর্জ সি বোল্ট আর কখনও আসেননি দ্বীপটিতে। যে স্ত্রীর ভালোবাসার জন্য এই প্রাসাদ, তিনিই তো চলে গেছেন চিরতরে। এসে আর কষ্ট বাড়িয়ে লাভ কী! প্রেয়সীর ভালোবাসাকে এরচেয়ে আর কিভাবে মর্যাদা দেওয়া যেত!
এখন হাজার হাজার পর্যটক যখন এই ইতিহাস শোনেন তাদের চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। তারা আফসোস করেন মিসেস বোল্টের জন্য। শ্রদ্ধা জানান জর্জ সি বোল্টকে ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টির জন্য।
সূত্র: বিবিসি।