যে কারণে তিনবার মাইলস ছাড়েন শাফিন আহমেদ

লেখক:
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। আমেরিকার ভার্জিনিয়ার সেন্টার হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় আজ (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

শাফিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তার বড় ভাই হামিন আহমেদ। তিনি জানান, শাফিনের ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এরপর ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে গত দু’দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সেখান থেকে আর ফেরানো গেলো না।

আশি ও নব্বইয়ের দশকে তুমুল জনপ্রিয় ছিল ব্যান্ড সংগীত। উচ্চারণ, ফিলিংস (নগর বাউল), এল আর বি’র সঙ্গে আরও একটি নাম সে সময়ে বেশ শোনা যেত, তা হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদের মাইলস।

সত্তর দশকের শেষদিকে মাইলস প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যান্ডটি বিভিন্ন জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে। হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ, মানাম আহমেদ প্রমুখ ছিলেন এই ব্যান্ডের প্রাণ।

এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। কণ্ঠের পাশাপাশি শাফিন ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন। তবে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গেল কয়েক বছর ধরেই ভাঙন ধরে এই ব্যান্ডে। যে কারণে ‘তিনবার’ মাইলস ছেড়ে বের হয়ে যান শাফিন আহমেদ।

সবশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি ভিডিও বার্তায় শাফিন আহমেদ জানান, তিনি মাইলস থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যান্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবিও করেন তিনি।

সে সময় ভিডিও বার্তায় শাফিন বলেন, ‘মাইলসের সঙ্গে আমার পথ চলা সেই ১৯৭৯ সালে। অনেক সময় দিয়েছি, শ্রম দিয়েছি, অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ হয়েছে। মাইলসের আজকের অবস্থানের পেছনে আমার কতটা অবদান সেটা সবাই জানেন। চলতি বছরের শুরুতে একটা সিদ্ধান্ত নেই মাইলসের বর্তমান লাইনআপের সঙ্গে আমার মিউজিকের কোনও কার্যক্রম সম্ভব হবে না। বর্তমান লাইনআপের সঙ্গে সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবো। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সংগীতের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে। কনসার্টেও থাকবো, রেকর্ডিংয়েও পাওয়া যাবে। আমরা প্রত্যাশা থাকবে মাইলস নামটি যেন অপব্যবহার না হয়। মাইলসের সঙ্গে যদি কাজ না করতে পারি তাহলে এখানেই মালইসের কার্যক্রম স্থগিত করাই বেস্ট ডিশিশন বলে আমি মনে করি।  অন্য কেউ যেন মাইলস নামটি ব্যবহার না করে। ’

শাফিন আহমেদ ছাড়া মাইলস ব্যান্ডের লাইন-আপ- হামিন আহমেদ (ভোকাল ও গিটার), মানাম আহমেদ (ভোকাল ও কি-বোর্ড), ইকবাল আসিফ জুয়েল (ভোকাল ও গিটার), সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য (ড্রামস)।

এর আগে ২০১০ সালের শুরুর দিকেও একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শাফিন। যদিও কয়েকমাস পর আবারও দলে ফেরেন। এরপর ২০১৭ সালে অক্টোবরেও তিনি আরও একবার ব্যান্ডটি ছাড়ার কয়েকমাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে ফের ব্যান্ডে ফিরেছিলেন।

ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। দলটির প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রকাশ হয় ১৯৯১ সালে। তার আগে প্রকাশিত হয় দু’টি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘এ স্টেপ ফারদার’।

মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘নীলা’, ‘কি যাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’ ও ‘প্রিয়তমা মেঘ’।