যে কারণে ট্রাম্পের বক্তব্যের ভিডিও ব্লক করল ফেসবুক, ইউটিউব

:
: ৩ years ago

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট বা ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনার পর সমর্থকদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া বক্তব্যের ভিডিও সরিয়ে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউব।

বক্তব্যে ট্রাম্প তার সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে বললেও তার বক্তব্যে আবারও নির্বাচনে কারচুপির ‘মিথ্যা’ অভিযোগ তুলেছেন।

ফেসবুক ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পর্কে জানিয়েছে, আমরা সেটি সরিয়ে নিয়েছি কারণ আমাদের বিশ্বাস তা চলমান সহিংসতা স্তিমিত করার চেয়ে সহিংসতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাশনাল মল চত্বরে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে যখন ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে ও বাইরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন আবারও একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এতে সমর্থকদের শান্ত হওয়ার এবং ঘরে ফেরার কথা বলেন। তবে আবারও নির্বাচনে কারচুপির মিথ্যা অভিযোগ তোলেন।

ইউটিউব জানিয়েছে, তারা ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছে কারণ সেটি ‘নির্বাচনে কারচুপি সংক্রান্ত তথ্য ছড়ানোর নীতি’ ভঙ্গ করেছে।

সবার পরে ট্রাম্পের ভিডিও সরিয়ে নেয় টুইটার। তারা শুরুতে ভিডিওটি সরিয়ে না নিলেও তার অ্যাকাউন্টের টুইট, রিটুইট, লাইক ও কমেন্টের অপশন বন্ধ রাখে। তবে পরে তারাও ভিডিওটি সরিয়ে নেয়।

টুইটার জানিয়েছে, সহিংসতার সম্ভাবনা থাকায় আমাদের সিভিক ইন্টেগ্রিটি পলিসি অনুযায়ী আমরা এঙ্গেজমেন্ট সীমিত করছি।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা বুধবার কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেন। উভয় কক্ষের এই অধিবেশনে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের দেয়া ভোটগুলো গোনা হয় এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করা হয়। অধিবেশনের কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই এর বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হতে থাকেন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। সমাবেশে বক্তব্য দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সমাবেশের অল্প একটু দূরেই ক্যাপিটল ভবন। ট্রাম্পের কয়েকশ উগ্র সমর্থক সেখানে গিয়ে ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালেই পুলিশের বাধা ভেঙে ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। ভবনে ভাঙচুরও চালান। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। গোলাগুলি এবং প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে।

ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী তাণ্ডবের মুখে ক্যাপিটল ভবন অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। ওয়াশিংটনে জারি করা হয় কারফিউ।

সংঘর্ষের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) সদস্যদের পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে সিনেট অধিবেশনও মুলতবি করা হয়।

পরে ক্যাপিটল ভবন থেকে ট্রাম্প সমর্থকদের হটাতে তিনঘণ্টা সময় লাগে পুলিশের। শেষ পর্যন্ত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাপিটল ভবনকে নিরাপদ ঘোষণা করে পুলিশ। পরে আইনপ্রণেতারা ফের অধিবেশনকক্ষে ফিরে আসেন। আবার শুরু হয় যৌথ অধিবেশন।

উল্লেখ্য, কংগ্রেসে স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। আর ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবেও অনেক পিছিয়ে ট্রাম্প। তার ২৩২টির বিপরীতে বাইডেনের পক্ষে আসে ৩০৬টি। কিন্তু শুরু থেকেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়েছেন।