তার দল কলাবাগান ক্রীড়া চক্র রেলিগেশনে। মানে প্রিমিয়ার লিগ থেকে নেমে প্রথম বিভাগে। কিন্তু ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল একটি বিশেষ কৃতিত্বে এখন সবার ওপরে।
বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক লিগে সর্বাধিক পাঁচ সেঞ্চুরির মালিক আশরাফুল। আর বিসিএল ধরলে এ মৌসুমে তার শতরান ছয়টি।
মোদ্দা কথা, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রথম বার লিগে তেমন কিছু করতে না পারলেও এবার দ্বিতীয়বার প্রিমিয়ার লিগ খেরতে নেমে ব্যাটসম্যান আশরাফুল ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। শুধু এবারের লিগেই নয়। এতগুলো সেঞ্চুরি এক লিগে আগে ছিল না কারোই। অর্থাৎ ঢাকার সিনিয়র ডিভিশন অার প্রিমিয়ার লিগের ৪৪ বছরের ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ডস্রষ্টা আশরাফুল।
ওপরের কথাগুলো প্রাসঙ্গিক কারণেই বলা। এ তথ্য ও রেকর্ডের কথা বার্তা এখন সারা বাংলাদেশ জানে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও চাওর হয়ে গেছে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার মাঠে ফেরা আশরাফুল দ্বিতীয় বার লিগ খেলতে নেমেই শতরানের নহর বইয়ে দিয়েছেন। এসব খবর এখন সব ক্রিকেট-অনুরাগির জানা হয়ে গেছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর সারা দেশে ক্রিকেট অনুরাগিদের মধ্যে আশরাফুলের এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিক্রিয়া দু’ধরনের। এক পক্ষ উচ্ছ্বসিত, উদ্বেলিত, পুলকিত। তারা ভাবছেন, আশরাফুল ফুরিয়ে যাননি। আবার ফিরে এসেছেন। ভালো খেলার, রান করার এবং প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর কর্তৃত্ব এবং প্রভাব বিস্তার করে দীর্ঘ ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য এখনো আছে তার। এবং জাতীয় দলে খেলার জন্য এখনই প্রস্তুত।
আবার বিপরীত মতোও আছে। একটা পক্ষ মনে করছেন, এত শিগগিরই আশরাফুলের পাপ মোচন যেন না হয়। তিনি যে ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, জাতীয় দল এবং বিপিএলে ম্যাচ পাতিয়েছেন, সেজন্য শুধু নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়। ফর্ম ফিরে পাবার পরও যেন তাকে বোঝানো হয়, তিনি অপরাধ করেছিলেন।
শুধু নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ফেরাই অপরাধমুক্তির সার্টিফিকেট নয়। জাতীয় দলে ফিরতে হলে তাকে আরও সময় অপেক্ষায় রাখা উচিত। তার চেয়ে বড় কথা, দীর্ঘ সময় জাতীয় দল তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন। এ সময়ে আকাশে অনেক মেঘ আর বুড়িগঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও এগিয়েছে। তার ধরণ, মেজাজ, মর্জি, গতি প্রকৃতি, ট্রেনিং সিডিউল ও স্কিলও বদলেছে। আশরাফুল যার সঙ্গে পুরোপুরি ধাতস্ত নন। কাজেই এখনই বা নিকট ভবিষ্যতে তাকে জাতীয় দলে বিবেচনা করা হবে অদূরদর্শি সিদ্ধান্ত।
এদিকে আশরাফুল ভক্তরা মাঠ-ঘাট, অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আর রেস্টুরেন্ট গরম করে ফেলছেন। চায়ের আড্ডায় তাকে নিয়ে অনেক কথা।
একটা বড় অংশর ধারণা, এক লিগে পাঁচ আর এক মৌসুমে ছয় শতরান যখন করে ফেলেছেন, তখন আশরাফুল আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। তার মানে আবার আশরাফুল জাতীয় দলে খেলার জন্য এখন তৈরি। আবার কেউ কেউ আরও একটু রয়ে সয়ে বলছেন, এভাবে যখন ম্যাচের পর ম্যাচ সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছেন, তখন বুঝতে হবে আশরাফুল ফুরিয়ে যাননি। তার সামর্থ্য আছে জাতীয় দলে খেলার। তিনি ইচ্ছে করলেই আবার বাংলাদেশ দলে ফিরতে পারেন।
আচ্ছা, আশরাফুল নিজে কি ভাবছেন? এক লিগে পাঁচ শতক ও এক মৌসুমে ছয় সেঞ্চুরি করার পর আশরাফুলের নিজের অনুভূতি কি? আবার জাতীয় দলে ফেরার চিন্তা কি মাথায় এসেছে? আশরাফুল নিজে এই পাঁচ সেঞ্চুরিকে কিভাবে দেখছেন? কেউ আগে যা কখনো করতে পারেননি, এক লিগে পাঁচ শতক উপহার দিয়ে কি আবারো নিজেকে জাতী দলে ফেরার দাবিদার ভাবছেন? এসব প্রশ্নও উঁকি ঝুকি দিচ্ছে।
নিশ্চয়ই তার উত্তর জানতেও খুব ইচ্ছে করছে, তাইনা? তাহলে শুনুন। ভক্ত, সমর্থক, সুহৃদ আর শুভানুধ্যায়ীরা যাই ভাবুন, আর অতি উৎসাহী হয়ে তাকে জোর করে যতই এখনই জাতীয় দলে ফেরাতে মরিয়া হোন না কেন, আশরাফুল কিন্তু অমন চিন্তা করছেন না। তার মাথায়, অনুভব ও উপলব্ধিতে এখন তো নয়ই, নিকট ভবিষ্যতেও জাতীয় দলে ফেরার চিন্তা নেই।
আজ বিকেএসপি মাঠে ব্রাদার্সের বিপক্ষে এবারের লিগের পঞ্চম শতক হাঁকিয়ে ঢাকা ফেরার পথে সাথে দীর্ঘ সময় একান্ত আলাপে অনেক কথার ভীড়ে আশরাফুল সোজা সাপটা জানিয়ে দিলেন, ‘কে কি ভাবছেন বা কার চিন্তা কি, আমি তা বলতে পারবো না। আমি আমার মতো করে ভাবছি। আমার ভাবনা ও চিন্তায় জাতীয় দল নেই। আমি এখন কেন, নিকট ভবিষ্যতেও জাতীয় দলে ফেরার কথা ভাবছি না। ভাবতে চাইওনা।’
কেন ভাবতে চাননা? আশরাফুলের পরিষ্কার জবাব, ‘প্রথম কথা হলো আমি প্রিমিয়ার লিগ আর জাতীয় লিগ খেলার অনুমতি পেলেও এ বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত জাতীয় দল এবং বিপিএল খেলতে পারবো না। সেটা আমার শাস্তির অংশ। অর্থাৎ আগস্টের আগে বিপিএল আর জাতীয় দলে খেলার বিষয়ে সরাসরি আইসিসির নিষেধাজ্ঞা আছে। আর নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে এবং তা বলবৎ থাকা অবস্থায় জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ যেহেতু নেই, তাই আমার চিন্তায় জাতীয় দলও নেই।’