যেমন হতে পারে প্রথম টেস্টের একাদশ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

দীর্ঘ ৯ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। টেস্ট শুরুর আগে ছিল নানা সমস্যা। সাকিবের হঠাৎ ছুটিতে যাওয়া, রুবেলের ভিসা জটিলতা এবং সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচের সময় তামিম আর সৌম্যের ইনজুরিতে পড়া। সব মিলিয়ে একটা জটিল সমস্যা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সব পেছনে ফেলে এসে, এখন সবার চোখ প্রথম টেস্ট ম্যাচের দিকে। প্রথম টেস্টের আগে সবারই আগ্রহ, কেমন হতে পারে প্রথম টেস্টের একাদশ?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী জানিয়েছেন, তামিম এবং সৌম্য দু’জনই সুস্থ রয়েছেন। টেস্টের আগেরদিন (বুধবার) অনুশীলন শেষে মুশফিকও তাই বলেছেন। সুতরাং, বলাই যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের হয়ে ইনিংস শুরু করবেন তামিম এবং সৌম্য জুটি।

তিন নম্বর পজিশন নিয়ে একটু চিন্তা রয়েছে। গত দুই সিরিজে যেহেতু টিম ম্যানেজম্যান্ট ইমরুল কায়েসের ওপরই ভরসা রেখেছেন, তাই পচেফস্ট্রমেও ইমরুলের ওপরই ভরসা রাখার সম্ভবনা রয়েছে। এর মূল কারণই হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ইমরুলের খেলার অভিজ্ঞতা। যদিও ৯ বছর আগে ইমরুল ছিলেন ওপেনার।

এরপরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চার নম্বর পজিশন। যেহেতু দল ঘোষণার সময় বারবার বলা হয়েছে সাকিবের পরিবর্তে মাহমুদউল্লাহকে দলে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহর একাদশে থাকাটাই স্বাভাবিক। আর টানা চারজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান খেলাতে না চাইলে চার নম্বরে মাহমুদউল্লাহ হতে পারেন সেরা বিকল্প। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। তবে নিয়মিত চার নম্বরে খেলা মুমিনুলকে যদি তার পজিশনেই রেখে দেয়া হয়, তাহলে পাঁচ নম্বরে দেখা যেতে পারে মাহমুউল্লাহকে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা বাঁ-হাতি খেলানোর সমস্যা ছিল, অফ স্পিনার নাথান লিওন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, সেখানকার উইকেট ঢাকার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গতিময় এবং বাউন্সি। যদিও প্রোটিয়াদের হাতেও রয়েছে অন্যতম সেরা স্পিনার ইমরান তাহির। তবে তিনি যেহেতু অফ স্পিনার নন, লেগ স্পিনার- সে ক্ষেত্রে বাঁ-হাতিদের জন্য নাথান লিওনের মতো সমস্যা নাও হতে পারে।

টিম ম্যানেজমেন্ট এ চিন্তা মাথায় আনলে দেখা যাবে নিয়মিত ব্যাটিং অর্ডারে হয়তো আর পরিবর্তন আসছে না। চারে মুমিনুল, পাঁচে মাহমুদউল্লাহ ব্যাট করবেন। এমনকি চার নম্বর নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার কারণে মুশফিককেও দেখা যেতে পারে এই পজিশনে। তিনি যদি উইকেট কিপিং না করেন, লিটন দাসকে দলে নেয়া হয় কিপিংয়ের জন্য- তাহলে চার নম্বরে মুশফিককে দেখা যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়।

মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চার নম্বরে কে খেলবেন- এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কারণ, মুশফিক উইকেট কিপিং না করলে তাকে চার নম্বরেই ব্যাট করানোর সম্ভাবনা বেশি। সেটা হলে মুমিনুলের ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তিনি চলে আসতে পারেন পাঁচে। অর্থাৎ চার এবং পাঁচে মুশফিক-মুমিনুল এ দু’জন থাকছেনই। প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম ইনিংসে এভাবেই খেলতে দেখা গেছে বাংলাদেশে দলের ব্যাটসম্যানদের।

মুশফিক কিপিং না করলে অবশ্যই দলে আসবেন লিটন দাস। প্রস্তুতি ম্যাচে উইকেট রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এই দায়িত্ব ছিল লিটন কুমার দাসের ঘাড়ে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর থেকেই অধিনায়কের মুশফিকের ওপর থেকে দায়িত্ব কমানোর কথা হচ্ছিল বারবার। সেটাই যদি হয়, তবে একাদশে থাকার সম্ভবনা রয়েছে লিটন কুমার দাসের। সে ক্ষেত্রে দল থেকে বাদ পরতে পারে প্রস্তুতি ম্যাচে অসাধারণ ইনিংস খেলা মুমিনুল হক। এমনটা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, যতক্ষণ আমাদের জাতীয় দলের কোচ হিসেবে রয়েছেন চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহে! তখন ছয় নম্বর এবং সাত নম্বর পজিশনে লিটন এবং সাব্বির- এই দু’জনকে দেখা যেতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে তিন পেসার নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। এটা প্রায় নিশ্চিত। বাকি থাকে আর একটি স্থান। যেখানে থাকবেন একজন স্পিনার। তিনি কি মিরাজ না তাইজুল? যেহেতু দলে সাকিব নেই। আর দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে বেশ কয়েকজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সেদিক থেকে স্পেশালিস্ট বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে মিরাজের চেয়ে তাইজুলের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।

তিন পেসারের মধ্যে অটোমেটিক চয়েজ মোস্তাফিজুর রহমান। যেকোনো ফরম্যাটে মোস্তাফিজের বিকল্প এখন নেই বললেই চলে। ভিসা জটিলতার পরও বিসিবির উদ্যোগে দক্ষিণ আফ্রিকা নেয়া হয়েছে সদ্য ইনজুরি থেকে ফেরা রুবেল হোসেনকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন এবং দ্রুততম উইকেটে রুবেলের যথেষ্ট গতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দ্বিতীয় পেসার হিসেব দলে তাই রুবেলের অন্তর্ভুক্তিও অনেকটা নিশ্চিত।

আর তৃতীয় পেসার হিসেবে তাসকিনই হয়তো সবচেয়ে যোগ্য নাম হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে দরকার বেশি গতির পেসার। সে সক্ষমতা রয়েছে তাসকিন আহমেদের। ফলে তিন পেসার হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্তি হতে পারে মোস্তাফিজ, রুবেল এবং তাসকিন।

তবে তাসকিনের পরিবর্তে দলে সুযোগ পেতে পারে সুভাশিষ রায়ও। সদ্যই হাই পারফরম্যান্স দলের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করা সুভাশিষও রয়েছে বেশ ফর্মে। তবে বিশ্লেষোকদের মতে, সুভাষীশের চেয়ে তাসকিনই হবে বেস্ট চয়েজ দলের স্বার্থে।

যেমন হতে পারে প্রথম টেস্টের একাদশ
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক/লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম/মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ/শুভাশিষ রায়।