সদর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামে প্রায় ৫০ মণ ওজনের একটি গরুকে (নাম যুবরাজ) দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ যুবরাজকে দেখতে এসে তার সঙ্গে সেলফি তুলছে। অনেকে আবার সেই ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এসব কারণে যুবরাজকে দেখার ভিড় বেড়েই চলেছে। এ যুবরাজ কোনো রাজপুত্র নয়, শাহ আলম মিয়ার একটি ফ্রিজিয়ার ষাঁড়। শখ করে যার নাম রাখা হয়েছে যুবরাজ। এরই মধ্যে একজন যুবরাজের দাম হাকিয়েছে ১৯ লাখ টাকা। আর মালিক শাহ আলম চেয়েছেন ৩০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, মো. শাহ আলম মিয়ার পৈত্রিক বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায়। স্কুল ও কলেজ জীবন শিবচরেই কেটেছে তার। প্রায় ৮ বছর আগে এক বন্ধুর হাত ধরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামে চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। এরপর অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি সিঙ্গাপুরসহ ৪১টি দেশ ঘুরেছেন। পরে ঝিনাইদহে ফিরে এসে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়ি ও বাড়ির সাথে একটি খামার করেন। খামারের নাম দিয়েছেন আব্দুল্লাহ এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম। ৭ বছর হলো এ খামারেই তিনি গরু লালন-পালন করছেন। বর্তমানে তিনি এ খামারেই সময় দেন। এগুলো লালন-পালন করে অর্থ উপার্জন করছেন।
ফার্ম মালিক শাহ আলম মিয়া জানান, যুবরাজ নামে ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি স্থানীয় বাজার থেকে ৬ মাস বয়সে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় কিনে আনা হয়। এখন তার বয়স ৪ বছর ৬ মাস। শুধুমাত্র এ ষাঁড়ের পেছনে প্রতিদিন খাবারের জন্য খরচ হয় প্রায় ২ হাজার টাকা। আমি প্রায় ৭ বছর যাবৎ খামার পরিচালনা করছি। যুবরাজের ওজন এখন ৫০ মণের উপরে। গরুটির দাম চেয়েছি ৩০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে আমার গরুটির দাম ১৯ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
তিনি বলেন, গত বছর ঈদে এটির দাম ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয়েছিল তবুও বিক্রি করিনি। এবার করোনা ভাইরাসের মধ্যে কি হয় জানি না ভাগ্যে কি আছে? গরুটির পেছনে ১৭-১৮ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। যদি আমি ন্যায্য মূল্য না পাই তাহলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। এভাবে আমি নয়, আমার মতো অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে দাবি এবারের কোরবানির হাট যাতে ভালোভাবে বসে এবং খামারিরা যাতে ন্যয্যমূল্য পাই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান জানান, শাহ আলম মিয়া গরুর সঙ্গে কথা বলে।সে নাম ধরে ডাক দিলেই গরু বুঝতে পারে। মালিক যে নির্দেশ দেয় সেটাই যুবরাজ পালন করে।
তিনি বলেন, যুবরাজ তাদের গ্রামটি অনেক এলাকার মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসছেন যুবরাজকে দেখতে।
ঝিনাইদহ শহর থেকে আসা সেন্টু জানান, তাদের এলাকার অনেকে যুবরাজকে দেখে গল্প করছিলেন। এ গল্প শুনে তিনিও এসেছেন।
তিনি বলেন, গরুটি দেখে গরু মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে এটি একটি হাতি। জীবনে এমন গরু কখনও দেখিনি। এছাড়াও তিনি প্রবাসী এক আত্মীয়ের জন্য আসছে ঈদুল আজহায় কোরবানি দেয়ার জন্য গরুটির দাম দিয়েছেন ১৯ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী জানান, তারা গরুটির ওজন আনুমানিক ৫০ মণ বলে ধারণা করছেন। ঈদ আসতে এখনও কিছুদিন বাকি আছে। এরই মধ্যে আরও কিছু ওজন বাড়তে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
তিনি আরও বলেন, জেলায় যুবরাজই প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে শ্রেষ্ঠ গরু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।