আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগেই ভোট দেয়ার হিড়িক পড়েছে। দেশটির রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত রেকর্ড দুই কোটি ২০ লাখ আমেরিকান আগাম ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকশন প্রজেক্টের বরাতে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
২০১৬ সালে নির্বাচনের ঠিক এই সময়ে আগামী ভোট পড়েছিল প্রায় ৬০ লাখ। এ বছর আরও বেশি ভোটার ভোট দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে এবার আগাম ভোট বা ডাকযোগে ভোট বাড়বে, সেই আভাস অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস জানিয়েছে, এবার যে আগাম ভোট পড়েছে তা ২০১৬ সালে মোট ভোটের প্রায় ১৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে অনেকেই নির্বাচনের দিনের চেয়ে বিকল্প কোনো দিনে ভোট দেয়ার কাজটি সেরে ফেলতে চাইছেন। এ কারণেই এবার আগাম ভোট রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগাম ভোট শুরুর প্রথম দিন গত মঙ্গলবার রেকর্ড সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়েছে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে। অথচ কে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন এই বিচারে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশ কড়াকড়ি রয়েছে টেক্সাসে।
সোমবার রেকর্ড সর্বোচ্চ এক লাখ ২৬ হাজার ৮৭৬টি আগাম ভোট পড়েছে জর্জিয়ায়। এদিকে এবারের নির্বাচনে বেশ গুরত্বপূর্ণ রাজ্য ওহাইওতে ২৩ লাখ ভোটার ডাকযোগে ভোট দেয়ার জন্য রাজ্যটির নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের কাছে আগাম ব্যালটের জন্য আবেদন করেছেন; যা ২০১৬ সালের নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণ।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান সমর্থকরা আগাম ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা দ্বিগুণ আগাম ভোট দিয়েছেন। আর ডেমোক্র্যাট আগাম ভোট দেয়ায় সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা।
বিবিসি লিখেছ, তবে আগাম ভোট বেশি পাওয়া মানেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হয়েছেন এমনটা ভাবার কারণ নেই। ডাকযোগে ভোটের বিরোধিতা করা রিপাবলিকান বলছেন, আগাম ভোটে হয়তো ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হতে পারেন কিন্তু নির্বাচনের দিনে বিপলু সংখ্যায় ভোট দেবেন রিপাবলিকান সমর্থকরা।
এবারের নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই ডাক ভোট নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও সন্দেহ তৈরি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেছেন, ডাকযোগে ভোটের কারণে ব্যাপক আকারে কারচুপি হতে পারে। যদিও এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি।
ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ভোট কারচুপির হার ০.০০০০৪ থেকে ০.০০০৯ শতাংশ হতে পারে। বিবিসি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন আমেরিকানরা। এমনকি ভোট দেয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেককে ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে।
দেশটির তরুণরা ঐতিহ্যগতভাবে কম সংখ্যায় ভোট দিলেও এ বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ভোট দিচ্ছেন। এক যুগ আগে ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রথমবার জয়ী হওয়ার সময়ের চেয়েও এবার তরুণদের ভোট সর্বোচ্চ পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ওবামা।
অ্যাক্সিওসের করা একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশটির প্রতি দশ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে চার জন বলছেন, এবারের নির্বাচনে যদি ট্রাম্প ফের জয় পান তাহলে তারা এর প্রতিরোধ করবেন। অপরদিকে প্রতি দশ জনের মধ্যে তিন জন শিক্ষার্থী বলেছেন, যদি জো বাইডেন জয় পান তাহলে তারা তা প্রতিরোধ করবেন।