যাত্রাবাড়ী পুলিশের এসিসহ ১৪ জনের চাঁদাবাজির প্রমাণ মেলেনি

:
: ৭ years ago

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইফতেখারুল ইসলামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হান উল ইসলামের আদালতে পুলিশের ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন।

তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজি দেবেন বলে আদালতে সময়ের আবেদন করেন মামলার বাদী শাহনা আক্তার। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

মামলার বাদী শাহনা আক্তার এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটি সঠিক তদন্ত হয়নি। এর বিরুদ্ধে আমরা নারাজি দেবো।

গত ১২ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালতে মামলার আবেদন করেন শাহনা আক্তার নামে এক সাংবাদিকের স্ত্রী। আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে আদেশের জন্য ১৯ জুলাই দিন ধার্য করেন। এদিন আদালত মামলাটি পুলিশের ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনারকে (ডিসি) মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ‘শাহনা আক্তারের স্বামী ফরমান উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন। পরে তিনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেন। ফরমান উল্লাহ যাত্রাবাড়ী থানার কিছু পুলিশ সদস্যকে মাদক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজশে নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়া হয়রানি করতে দেখতে পান। এতে তিনি চলতি বছরের ৫ মে, ৮ জুন ও ১৬ জুন ডাকযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের বিভিন্ন দফতরে পৃথক অভিযোগ করেন।অভিযোগের খবর পেয়ে অভিযুক্তরা তাকে ফোন করে থানায় ডেকে নিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলেন। অভিযোগ তুলে না নিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয় তাকে।’

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘গত ২১ জুন শাহনা আক্তার তার স্বামীর সঙ্গে ওয়ারী থানাধীন রাজধানী সুপার মার্কেটে যান। এ সময় অভিযুক্তদের একজন ফরমান উল্লাহকে সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে ডেকে নেন। দীর্ঘ সময় ফরমান উল্লাহ ফিরে না আসায় শাহনা আক্তারও সেখানে যান। এ সময় তিনি দেখতে পান যে, আসামিরা ফরমান উল্লাহকে টেনে-হিঁচড়ে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যাচ্ছেন। শাহনা আক্তার পুলিশের ওয়ারী জোনের উপকমিশনার (ডিসি) ফরিদকে বিষয়টি জানান। ডিসি ফরিদ এসি ইফতেখারুল ইসলামকে ফোন করে ফরমান উল্লাহকে ছেড়ে দিতে বলেন এবং শাহনা আক্তারকে থানায় গিয়ে তার স্বামীকে নিয়ে আসতে বলেন। শাহনা আক্তার থানায় গেলে এসি ইফতেখারুল ইসলাম ডিসি ফরিদকে গালিগালাজ করেন এবং নিজেকে নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানের মেয়ের জামাই পরিচয় দিয়ে শাহনা আক্তারকে অকথ্য গালাগাল, থাপ্পড় মারেন ও ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এ সময় শাহনা আক্তার স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলে এসি ইফতেখারুল ছয় লাখ টাকা দাবি করেন। পরে শাহনা আক্তার তাদের দুই লাখ টাকা দেন। এর আগে ফরমান উল্লাহকে মারধর করেন অভিযুক্তরা। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে শাহনা আক্তার সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্বামীকে তিনটি মাদক মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ফরমান উল্লাহ কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তাই বাদী নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করেন।’

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রশাসন) আনিসুর রহমান, ওসি (তদন্ত) তোফায়েল আহমেদ, এসআই জাকির হোসেন, ওমর ফারুক, কবির হোসেন উকিল, শাহীন পারভেজ, লক্ষ্মীকান্ত রায়, শহীদুল্লাহ, কে এম এনায়েত হোসেন, এএসআই আতোয়ার রহমান, কনস্টেবল সাইফুল, পুলিশের সোর্স খোকন ও সুমন।

এ দিকে যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী শাহনা আক্তারের স্বামী ফরমান উল্লাহ একাধিক মাদক মামলার আসামি। ফরমান উল্লাহ সাংবাদিতকতার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা করতেন। গত জুনে মাদকসহ গ্রেফতার হন ফরমান উল্লাহ। নতুন মামলা থেকে স্বামীকে বাঁচাতে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন তার স্ত্রী শাহানা আক্তার। গ্রেফতারের পর স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষ দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার স্ত্রী।