যশোর আইটি পার্কে ২০ হাজার কর্মসংস্থানের হাতছানি

:
: ৩ years ago

২০ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানের হাতছানি দিচ্ছে জলাধার ও বিশাল সবুজ মাঠের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। দেশের প্রথম এই ডিজিটাল জেলা শহরে বিনিয়োগ করলেই থাকছে নানা সুবিধা। যশোর আইটি পার্ক নামে পরিচিত এ পার্কে শুধু রোবটের মতো কাজ কিংবা ব্যবসা নয়, বরং সেখানে গেলেই দেখা মিলবে পার্কের মূল ভবনের পাশে পাঁচ একরের বিশাল জলাধার।

জলাধারের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির মাছ, যা দেখে কাজের চাপ থেকে মিলবে প্রশান্তি। এছাড়া মূল ভবনের দক্ষিণ পাশে রয়েছে সবুজ বেষ্টনী। যেখানে কর্মীদের হাঁটার জন্য রয়েছে পথ। তবে সেখানেও দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পার্কটি সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে সেখানে ভাড়া দেওয়া স্পেসের পরিমাণ ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮৫ বর্গফুট। প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার জনবল কাজ করছে। পার্কে বিনিয়োগকারীরা ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া ক্যাপিটাল মেশিনারি কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ট্যাক্সমুক্ত আমদানির সুযোগ পান। অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের জন্য তিন বছরের আয়কর অব্যাহতি রয়েছে।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের বেজপাড়া এলাকায় ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। কম্পিউটারের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ফ্রিল্যান্সিং, কল সেন্টার ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট—এই চারটি ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া দেশের সবগুলো পার্কের নির্মাণকাজ শেষ হলে আইটি শিল্পের জন্য ২৮ লাখ ৭২ হাজার বর্গফুট স্পেস গড়ে উঠবে। এতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

প্রথম ডিজিটাল শহর বলা হয় যশোরকে। কিন্তু কেন? এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান  বলেন, বর্তমানে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল কার্যক্রম চলছে। ই-নথিপত্রের মাধ্যমে আমরা সব কাজ করছি। ইউনিয়নগুলোতে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করতে পারছে জনগণ। এই মুহূর্তে অনলাইনে যারা আসছেন তারা শতভাগ সেবা পাচ্ছেন। পাসপোর্ট থেকে শুরু করে জমির পর্চা, দলিলের কপি সবকিছু ই-সার্ভিসের মাধ্যমে পাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের মূল ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট কাঠামো (স্টিল ও কংক্রিট) নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে ১২ তলাবিশিষ্ট স্টিলের স্ট্রাকচারের ডরমেটরি ভবন ও ১৫ তলাবিশিষ্ট স্টিল স্ট্রাকচারের এমটিবি ভবন। এছাড়া রয়েছে ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটি। এই ভবনে বিনিয়োগের জন্য ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫৫ বর্গফুট ভাড়াযোগ্য স্থান রয়েছে। আরও রয়েছে চারটি লিফট, দুটি ডেডিকেটেড ফায়ার সিঁড়ি ও ২৫০ জন ধারণক্ষমতার অডিটোরিয়াম। সেন্ট্রাল এসিবিশিষ্ট বিজনেস সেন্টারটি তিনতলায়। এতে চারটি মিটিং রুম, তিনটি কনফারেন্স রুম, লাউঞ্জ, ডুপ্লেক্স রেস্টুরেন্ট, ৩৫০ জন ধারণক্ষমতার অডিটোরিয়াম, ২০০ জন ধারণক্ষমতার একটি ফুডকোর্ট ও ১০০ জন ধারণক্ষমতার একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

ডরমেটরি ভবনটি ১২ তলাবিশিষ্ট। কক্ষ রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে ৩০টি টুইন শেয়ার, ৩৬টি ডিল্যাক্স, ১২টি স্যুইট রুম। এছাড়া জিমনেশিয়াম, গেম জোন তো রয়েছেই। পুরো পার্কের পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও বিপণনের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড। পার্কে মোট বিনিয়োগকারী ৫৬ জন। এর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ৪৬ জন।

সেখানে বিনিয়োগ করা যশোর আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিব হাসান  বলেন, কারও অধীনে কাজ না করে এখন আমি ২০ থেকে ২৫ জনকে চাকরি দিতে পারছি। এখানে বড় সুবিধা হচ্ছে আইটির কোনো গণ্ডি নেই। আপনি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসেই এখন কাজ করতে পারবেন। যে কোনো জায়গা থেকে আমার প্রোডাক্ট সেল বা বিক্রি করতে পারছি।

এই পার্কে কাজ করার চ্যালেঞ্জ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ তো আছেই। কারণ পার্কটি দেশের এক পাশে হওয়ায় দক্ষ মানুষ পাওয়া কঠিন। এজন্য আমরা যশোর আইটি ইনস্টিস্টিউট থেকে কিছু মানুষকে দক্ষ করে তুলছি।

জানা যায়, পার্কের ভেতরে ২০১৫ সালে ৩ পেটাবাইট ক্ষমতার ডিজাস্টার রিকভারি ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে তিন স্তরবিশিষ্ট ডাটা সেন্টার রয়েছে পার্কটিতে। কখনো দুর্যোগের কবলে পড়লে এই ডাটা সেন্টার থেকে তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা ছিল। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ঘোষিত সেই নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ক্ষমতায় এসে সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

এছাড়া কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্প হিসেবে প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তারও একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় সরকার। কয়েকদিন পরই ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার ১২ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে।