কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা আবেদনে এসপির এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনতে পারিনি, তাই এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হবো।’ আগামীতে এ ধরনের ভুল আর কখনো হবে না বলেও আবেদনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
আবেদনে তিনি আরো বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য আমার মনে সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিন্দুমাত্র অসম্মান দেখানোর কথা দূরে থাক, বরং বিচার বিভাগের দেয়া কাজে নিয়োজিত হতে পারলে নিজেকে সম্মানিত বোধ করি। এ ঘটনায় আমি মনের গভীর থেকে অনুতপ্ত। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) এই আবেদনের ওপর হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে এ ঘটনায় গত ২০ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ব্যাখ্যা দিতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২৫ জানুয়ারি তাকে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে ব্যাখ্যা চান আদালত।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
গত ১৯ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ
আসে সুপ্রিম কোর্টে।
এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসান বলেছেন, ‘কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি হতে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। এরপর ১৬ জানুয়ারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে এক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখি। তখন তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান। আমি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুথের বাইরে ডাকি। কথা বলা শুরু করতেই ভোটকেন্দ্রে ৪০/৫০ জন ফোর্সসহ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত প্রবেশ করেন।’
‘তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সঙ্গে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাদের চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে উনাকে নিয়ে যান।’
‘এরপরেও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কি করেন এখানে? আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্তস্বরে বলেন, আপনি এখানে কি করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে। আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক, চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি।’
‘এরপর এসপিসহ তার সঙ্গীয় ফোর্স আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্যে করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে কে পাঠায়? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কি আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।’
আবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গীয় ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রার্থনা করছি। এরপর ১৯ জানুয়ারি রাতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।’