তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। তবে এ মুহূর্তে হয়ত ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের এক নম্বর ও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান তিনি নন। তারপরও আইপিএল, বিগ ব্যাশ কিংবা যে কোনো টি-টোয়েন্টি আসরের আলোচিত ক্রিকেটার ‘ক্রিস গেইল’।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগিরা খুবই সৌভাগ্যবান। তারা ক্রিস গেইলের ব্যাটিং দেখেছেন বেশ ক’বার। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বিপিএলের আগের চার আসরের প্রতিবার দেখা মিলেছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ভয়ঙ্কর ওপেনার ক্রিস গেইলকে।
কিন্তু কোনবারই খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি তিনি। ২০১২ সালে হওয়া বিপিএলের প্রথম আসরে বরিশাল বার্নার্সের হয়ে ক্রিস গেইল অংশ নিয়েছিলেন পাঁচ ম্যাচে। আগেরবার মানে সর্বশেষ আসরেও পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটের ‘অলস সিংহ’ গেইল।
৭ দলের ডাবল লেগের আসরে অনেক কম মাচ খেলে রান সংগ্রহে সবার ওপরে থাকা অলিক কল্পনা, শীর্ষ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় জায়গা পাওয়াও কঠিন। গেইল তা পারেনওনি। বিপিএলের কোন আসরের রান তোলায় শীর্ষ তালিকায় জায়গা হয়নি তার।
তবে দুটি পরিসংখ্যানে সবার ওপরে গেইল। বিপিএলে সর্বাধিক তিন সেঞ্চুরির মালিক তিনি। সর্বাধিক ৬০ ছক্কাও এসেছে তার ব্যাট থেকে। তবে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রথম দু’বার গেইলের ব্যাট যেমন ধারালো ছিল, পরের দু’বার ততটা ছিল না।
২০১২ সালে প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসে পাঁচ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিসহ ১৮৭.০১ স্ট্রাইক রেটে ২৮৮ রান করেছিলেন গেইল। গড়ও ছিল দুর্দান্ত; ৯৬.০০। পরেরবার, ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে একটি মাত্র ম্যাচ খেলতে এসে এক ম্যাচে ২২৩.৫২ স্ট্রাইক রেটে ৫১ বলে ১২ ছক্কা আর পাঁচ বাউন্ডারিতে ১১৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে গেছেন গেইল।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ আসরে তার ব্যাট সেভাবে কথা বলেনি। ২০১৫ সালে চার ম্যাচে ১৬৩.৫২ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৩৯ রান। শতরান ছিল না একটিও। হাফ সেঞ্চুরি একটি। সর্বোচ্চ ৯২। আর গত বছরের রেকর্ড আরও জীর্ন। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ৫ ম্যাচে সংগ্রহ ১০৯। কোন ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৪৪। ২১.০০ গড়। স্ট্রাইকরেটও (১২৩.৮৬ ) ছিল তার মানের চেয়ে কম।
এবার নতুন বছর। নতুন দল, রংপুর রাইডার্সে নাম লিখিয়েছেন ক্যরিবীয় ব্যাটিং দানব। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল শনিবার শেরে বাংলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে মাঠে নামবেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে থাকবেন এ মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এক নম্বর উইলোবাজ, সাবেক কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীতে পা রাখা গেইল আগের দিন বিশ্রামে থেকে আজ শুক্রবার দলের সঙ্গে অনুশীলনে চলে আসলেন শেরে বাংলার একাডেমি মাঠে। সেখানেই স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তিনি।
আবার বাংলাদেশে আসতে পারার অনুভূতি তার মধ্যে। নতুন দল রংপুর রাইডার্স, মাশরাফির ক্যাপ্টেন্সি আর সঙ্গী ব্রেন্ডন ম্যাককালাম প্রসঙ্গ- কোনটাই বাদ যায়নি ওই কথোপকোথন পর্বে। প্রথমেই প্রশ্ন রাখা হলো, বাংলাদেশে আবার আসতে পেরে কেমন লাগছে?
গেইলের স্বপ্রতিভ জবাব, ‘বাংলাদেশে আবার ফিরে আসতে পারা এবং বিপিএলের একটা অংশ হতে পারাটা দারুণ। এবার আমি নতুন দলে। সেই দলের হয়ে আগামীকাল (শনিবার) প্রথম খেলা আমার। সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করছি দলকে জয়ের পথে ফিরিয়ে নিয়েই ভাল শুরুর মাধ্যমে বিপিএলে নিজেকে মেলে ধরতে পারব।’
সঙ্গী ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে নিয়ে দারুণ উচ্ছসিত গেইল। ম্যাককালামকে ধ্বংসাত্মক উইলোবাজ অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ব্রেন্ডন কতটা ধ্বংসাত্মক। তার সঙ্গে আবার ব্যাটিং উদ্বোধন করতে পারা বিশেষ একটা ব্যাপার।’
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দু’জনার একসঙ্গে ওপেন করার রেকর্ড আছে। আইপিএলের সেই প্রথম আসরেই। সেটা এখনো সুখ স্মৃতি হয়ে আছে। সে প্রসঙ্গ টেনে গেইলের মন্তব্য, ‘আইপিএলে আমরা আগে একসঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেছি। আবার আমরা সহযোদ্ধা। এটা আমাদের জন্য নতুন মিশন। আমরা বিধ্বংসী কিছু করার জন্য নামব। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। ভাল কিছু করার ক্ষেত্রে আমাদের ওপর প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে। নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা চালাতে চাই এবং আগামীকালের ম্যাচ জিততে চাই।’
তিনি এবং ম্যাককালাম টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দু’জন সেরা বিনোদনের খোরাক। এটা কি বাড়তি চাপ? সেটা মানছেন গেইল। তাই মুখে এমন কথা, ‘এ কারণে চাপটা আমাদের ওপরও থাকছে; কিন্তু আমরা এ সবই প্রত্যাশা করি। দর্শকদের অনেক শোরগোল থাকবে। এটা খুবই চমৎকার হবে, যদি আমরা ভাল শুরু করতে পারি। অনেক বেশি বাউন্ডারি হাঁকাতে পারি এবং দর্শকদের উত্তেজনা দিতে পারি। হয়তো অন্য ছেলেরা এর ওপর ভিত্তি করেই দারুণ কিছু গড়ে তুলবে এবং দেখা যাক কী ধরণের স্কোর আমরা পাই কিংবা দিতে পারি।’
তিনি সব সময়ই চেষ্টা করেন দর্শকদের আনন্দ দিতে। তাদের বিনোদনের কথা চিন্তা করে বেশিরভাগ সময় ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টাও থাকে। একথা অকপটে স্বীকার করে নিয়ে গেইল বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ই আমি যখন ব্যাট করতে নামি, মূল উদ্দেশ্য থাকে ভক্তদের উপভোগ্য কিছু দিতে। তারা অনেক অর্থ খরচ করে আমার ব্যাটিং উপভোগের জন্য আসে। আমি অনেক বেশি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে সমস্যায় পড়ি। তবে যখন এটা হয়ে যায়, ব্যাপারটা দারুণ হয় এবং সবাই সন্তুষ্ট হয়।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তার দল রংপুর রাইডার্সের ক্যাপ্টেন। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। অধিনায়ক ও নিজের দল সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গেইল একটা তাৎপর্য্যপূর্ণ কথা বলে ওঠেন, ‘শুধু আমি আর ম্যাককালামই সব করে দেবো- এমন ভাবার কোনই অবকাশ নেই। তা ভাবা ঠিকও হবে না। মর্তুজার নেতৃত্বে দলে অনেক অভিজ্ঞতার সমন্বয় আছে। বোলিং আক্রমণেও প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের বোপারাও আছে। এমন কোন পরিস্থিতি নেই যে আমাদের নির্দিষ্ট এক ব্যক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। দলে অনেক ম্যাচজয়ী পারফর্মার আছে। সুতরাং বিষয়টি এমন নয় যে, আমরা শুধুমাত্র গেইল এবং ম্যাককালাম কিছু করে দেবে, আর আমরা সেটার ওপর নির্ভর করব।’
বিপিএলে আগের চার আসর মিলে ম্যাচ খেলেছেন মোটে ১৫টি। আর তাতেই বিপিএলের সবচেয়ে বেশি ছক্কা (৬০টি) হাঁকিয়েছেন। এবারও কী সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর চিন্তায় মাঠে নামবেন? গেইলেরর জবাব, ‘সাধারণতঃ আমি কোন প্রতিযোগিতায় ছক্কার পরিমাণ নিয়ে পরিকল্পনা করি না। আশা করছি আমরা ভাল কোন শুরু করতে পারব আগামীকাল এবং হয়তো পুরো টুর্নামেন্টের জন্য একটা ছন্দ তৈরি করতে পারব।’
তার উপলব্ধিটা খুব পরিষ্কার। বিশ্বাস করেন তিনি এবং ম্যাককালাম দু’জনই প্রতিপক্ষ বোলিং তছনছ করে দেয়ার চিন্তা করেন। তারপরও আগামীকালের ম্যাচে ম্যাককালাম ও তার নিজের গেম প্ল্যান নিয়ে কথা বলতে চান, ‘আমরা দু’জনই একই চিন্তা করি। আমাদের গেম প্ল্যান নিয়ে কাজ করতে হবে। আমার এবং ম্যাককালামের মধ্যে কোন কিছু প্রমাণ করার নেই। আমরা নেমে উপভোগ করতে চাই এবং কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি অনুসারে খেলতে চাই। যদি কোন নির্দিষ্ট বোলারকে বিধ্বস্ত করতে হয়, আমরা যতখানি সম্ভব সেটা নিয়ে কাজ করব।’