‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এর রেশমা চরিত্র দিয়ে অভিনয় শুরু, এরপর একাধারে কখনও তিনি প্রযোজক, কখনও পরিচালক, ব্যবসায়ী কিংবা ফ্যাশন ডিজাইনার। তিনি আমাদের সবার প্রিয় নায়িকা মৌসুমী। ৩ নভেম্বর তাঁর জন্মদিনে পাঠকদের জন্য থাকছে মৌসুমীকে নিয়ে জানা-অজানা কিছু তথ্য-
মৌসুমীর পুরো নাম আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী। ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর খুলনায় জন্ম নেন ঢালিউডের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
অভিনয় জগতে প্রবেশের আগেই মৌসুমী বিজয়ী হন ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ এ। এরপরই নজরে আসেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের। বলিউডের চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর অফিসিয়াল বাংলা পুনর্নির্মাণে আরেক নবাগত সালমান শাহ এর সাথে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় মৌসুমীর। সেটা ১৯৯৩ সালের কথা, বয়স তখন মাত্র বিশ বছর। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন মৌসুমী, সুপারহিট এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নিজের অভিনয় দক্ষতার সাথে সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় সালমানের সাথে তাঁর জুটিও।
তবে শুধু সালমানের সাথেই নয়, একই বছর ওমর সানির সঙ্গে ‘দোলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী। প্রথম বছরেই তিনি চলে যান পরিচালকদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায়। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয় নি নায়িকা মৌসুমীকে। বিভিন্ন সময় জনপ্রিয় সব নায়কের সাথে জুটি বেঁধে দর্শকদের উপহার দিয়ে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সেরা অনেকগুলো চলচ্চিত্র।
মৌসুমীর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আছে ‘অন্তরে অন্তরে, ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘গরীবের রাণী’, ‘বীর সৈনিক’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘এক কাপ চা’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’, ‘আম্মাজান’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘খায়রুন সুন্দরী’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্র।
সহশিল্পী ওমর সানিকে বিয়ে করেন ১৯৯৬ সালে। ২১ বছরের সংসারে ফারদিন ও ফাইজা নামের দুই সন্তানের জননী মৌসুমী।
শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজক হিসেবেও সফল নায়িকা মৌসুমী। ১৯৯৬ সালে ‘গরীবের রাণী’ দিয়ে প্রযোজনা শুরু। এছাড়াও ‘সুখের ঘরে দুখের আগুন’, ‘আমি এতিম হতে চাই’ এর মতো বেশ কয়েকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের প্রযোজক তিনি।
পরিচালক হিসেবে মৌসুমীর অভিষেক হয় ২০০৩ সালে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ২০০৫ সালে পরিচালনা করেন দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘মেহের নিগার’।
মৌসুমীর আরেকটি পরিচয় অনেক সময়ই ঢাকা পড়ে যায় তাঁর অভিনয়শিল্পী পরিচয়ের আড়ালে। মৌসুমী গান গাইতে ভালবাসেন; শুধু ভালবাসেন তা-ই নয়, তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠও দিয়েছেন। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবিতে, ২০১৪ সালে ‘তারকাঁটা’ ছবির গানে কন্ঠ দেন মৌসুমী। ‘ছায়াছবি’ চলচ্চিত্রে ‘মন যা বলে বলুক’ নামক গানের গীতিকারও তিনি।
এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করা মৌসুমীর পুরস্কার প্রাপ্তির সংখ্যাও কম নয়। ২০০১ এ নার্গিস আক্তারের ‘মেঘলা আকাশ’, ২০১৩ তে চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ ও ২০১৪ তে মোস্তফা কামাল রাজের ‘তারকাঁটা চলচ্চিত্রের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে জিতে নিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পুরস্কারের ঝুলিতে আরও আছে তিনবারের মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কারও।
চলচ্চিত্র ছাড়াও ছোট পর্দার বিভিন্ন নাটক ও টেলিভিশনেও পাওয়া যায় মৌসুমীর উপস্থিতি।
এ বছর ৪৪ বছরে পদার্পন করা মৌসুমী কোটি বাঙালি ভক্তের হৃদয়ে আজও বিশ বছরের রেশমি। চিরসবুজ এই নায়িকার জন্য নীলফামারীনিউজের পক্ষ থেকে থাকল জন্মদিনে অশেষ শুভেচ্ছা।