মোদিকে ভুল প্রমাণ করল রিজার্ভ ব্যাংক

:
: ৬ years ago

দেড় বছর আগে কাকপক্ষীকে টের পেতে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। বাতিল হওয়া সেই নোটগুলোর মধ্যে ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশই সরকারের ঘরে ফেরত এসেছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

খবরটি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা টুইট করে বলেন, রিজার্ভ ব্যাংক প্রমাণ করে দিল, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটি ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৃষ্টি করা বিপর্যয়।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদি নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। সেই সময় বাজারে ৫০০ ও ১০০০ টাকার যত নোট চালু ছিল, তার মোট মূল্যমান ১৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। ওই পরিমাণ নোটের মধ্যে রিজার্ভ ব্যাংকে ফেরত এসেছে ১৫ লাখ ৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ফেরত না আসার পরিমাণ কম-বেশি ১৩ হাজার কোটি টাকা। আজ বুধবার প্রকাশিত রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাতিল নোট যাচাই করার কাজটা ছিল বেশ শ্রমসাধ্য। সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

নোট বাতিলের পেছনে প্রধানমন্ত্রী মোদি যেসব যুক্তি দেখিয়েছিলেন, রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন সেগুলো ভুল প্রমাণিত করল। মোদির প্রথম যুক্তি ছিল, এর ফলে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা ধরা পড়বে। দ্বিতীয় যুক্তি, জাল নোটের কারবারিরা অসুবিধের মধ্যে পড়বে। এর ফলে পিছু হটবে সন্ত্রাসবাদীরা। মোদির দাবি ছিল, অন্তত ৩ লাখ কোটি টাকা সরকারের ঘরে জমা পড়বে না। জমা না পড়া টাকা পুরোটাই কালো। এর ফলে দেশের অর্থনীতি প্রভূত উপকৃত হবে।

কার্যত দেখা গেল, রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি যুক্তি ও দাবি অসাড় প্রতিপন্ন করল। কংগ্রেসের নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম তাই আজ বুধবার টুইট করে বলেন, ‘ভুলবেন না, কেউ একজন দাবি করেছিলেন, ৩ লাখ কোটি টাকা সরকারের ঘরে জমা পড়বে না। ওটাই হবে সরকারের লাভ।’ চিদাম্বরম আরও বলেছেন, তাঁর ধারণা, ওই ১৩ হাজার কোটি টাকা নেপাল ও ভুটানে রয়েছে। কিছু নোট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী নেতারা খড়্গহস্ত হয়ে উঠেছেন। মোদিকে কটাক্ষ করে চিদাম্বরম বলেছেন, ওই সিদ্ধান্তের দরুন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১৫ কোটি ‘দিন আনি দিন খাই’ শ্রমিক কাজ হারান। হাজার হাজার ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কর্মচ্যুত হন লাখ লাখ মানুষ। আম আদমি নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করে বলেছেন, নোট বাতিল করে কার কী লাভ হলো, তা জানার অধিকার দেশের মানুষের রয়েছে। সরকারের উচিত এ নিয়ে এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়ান জানিয়েছেন, প্রথম যিনি ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন।
বস্তুত, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কয়েক মাসের মধ্যেই মোদি সরকার সারা দেশে অভিন্ন কর ব্যবস্থা বা জিএসটি চালু করে। দেশের অর্থনীতি এই জোড়া ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি বলে বিরোধীরা নিরন্তর প্রচার চালাচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্ট বিরোধীদের হাতে এক মোক্ষম হাতিয়ার তুলে দিল।