শেষ চার ম্যাচের ফলগুলো ছিল যথাক্রমে ড্র, পরাজয়, পরাজয় ও ড্র; যার ফলে নামতে নামতে পয়েন্ট টেবিলের ১২ নম্বরে চলে গিয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন ছিল বড় জয়। আজ (শনিবার) রাতে ঠিক তেমনই এক জয় পেল কাতালান ক্লাবটি।
ঘরের মাঠে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটিতে প্রথমার্ধে যেন গোলখরায় ভুগছিল বার্সেলোনা। বারবার আক্রমণ করেও জালে বল প্রবেশ করাতে পারছিল না তারা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন নিয়মিত অধিনায়ক লিওনেল মেসি এবং বদলে যায় দৃশ্যপট। শেষের ৪৫ মিনিটেই বার্সেলোনা করেছে ৪টি গোল।
প্রথমার্ধে ওসুমানে দেম্বেলের বুলেট গতির শটে পাওয়া গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও চারবার লক্ষ্যভেদ করে বার্সা পেয়েছে ৫-২ গোলের বড় জয়। প্রথমার্ধের পুরো সময় বেঞ্চে থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে দুই গোল করেছেন মেসি। অন্য তিন গোলে নাম তুলেছেন দেম্বেলে, গ্রিজম্যান ও পেদ্রি।
লা লিগায় এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে দুই গোল করলেন মেসি। সবশেষ ২০১৩ সালে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষেই বেঞ্চ থেকে মাঠে এসে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। এছাড়া সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০১৪ সালের পর এবারই প্রথম ম্যাচের শুরু থেকে না খেলেও দুই গোল করেছেন বার্সা অধিনায়ক।
মেসির জোড়া গোলের সুবাদে ৫-২ ব্যবধানে জিতলেও, বার্সার গোলের সংখ্যা অন্তত হাফ ডজন হতেই পারত। ম্যাচের প্রথমার্ধে, ৩৩ মিনিটের সময় গোলের সহজতম সুযোগ অর্থাৎ পেনাল্টি পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি গ্রিজম্যান। ডানদিকে ঝাপিয়ে গ্রিজম্যানের শট ঠেকিয়ে দেন বার্সার সাবেক গোলরক্ষক ক্লাওদিও ব্রাভো।
পেনাল্টি থেকে না পারলেও, দ্বিতীয়ার্ধে ওপেন প্লে থেকেই গোল করেছেন ফরাসি তারকা গ্রিজম্যান। জর্ডি আলবার পাস ধরে দ্বিতীয়ার্ধে বার্সার গোল উৎসবের সূচনাটাই করেছেন গ্রিজম্যান। যা সমতায় থাকা ম্যাচে বার্সাকে এগিয়ে দেয় ২-১ ব্যবধানে।
এর আগে প্রথমার্ধের ২২ মিনিটে বাম পাশ থেকে বুলেট গতির এক শটে বেটিসের জাল কাঁপান দেম্বেলে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে দেম্বেলের উদ্দেশ্যে পাস দিয়েছিলেন গ্রিজম্যান। ডান পায়ে সেটি রিসিভ করে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জায়গা বানান দেম্বেলে। চোখের পলকে বাম পায়ের শটে করেন ম্যাচের প্রথম গোল।
তবে প্রথম গোল করলেও প্রথমার্ধ শেষে এগিয়ে থাকা হয়নি বার্সেলোনার। কেননা প্রথমার্ধের অতিরিক্ত যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সেই গোল শোধ করে দেন বেটিসের ফরোয়ার্ড অ্যান্তনিও সানাব্রিয়া। ফলে ১-১ গোলে সমতায় থেকেই বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তরুণ আনসু ফাতিকে বেঞ্চে পাঠিয়ে দলের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসিকে মাঠে নামান বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান। নিজের প্রথম ও দলের তৃতীয় গোল পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় ৬১ মিনিট পর্যন্ত। তখন ম্যাচের দ্বিতীয় পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা।
ডি-বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করেছিলেন ম্যাচের প্রথম পেনাল্টির খলনায়ক আইসা মান্দি। রেফারির খানিক সন্দেহ থাকায় সাহায্য নেন ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারির। সেখান থেকেই নিশ্চিত হয় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় মান্দিকে।
এবার আর পেনাল্টি নিতে গ্রিজম্যানকে ডাকেনি বার্সেলোনা। মেসি মাঠে থাকায় তিনিই নেন এবারের শট, সহজেই পরাস্ত করেন সাবেক সতীর্থ ক্লাওদিও ব্রাভোকে। ফলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সা। এর ১২ মিনিট পর ব্যবধান কমান বেটিস ফরোয়ার্ড লরেঞ্জ গার্সিয়া।
তবে এটি যথেষ্ঠ ছিল না। কেননা ৮২ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান আবারও বাড়িয়ে দেন মেসি। চলতি মৌসুমে পেনাল্টি ছাড়া এটিই মেসির প্রথম গোল। ম্যাচের একদম শেষদিকে স্কোরশিটে নাম তুলেন পেদ্রি। তার গোলের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয় বার্সার ৫-২ ব্যবধানের বড় জয়।
এ জয়ের সুবাদে পয়েন্ট টেবিলের ৪ ধাপ এগিয়েছে রোনাল্ড কোম্যানের শিষ্যরা। এখন সাত ম্যাচে ৩ জয় ও ২ ড্র’তে ১১ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনার অবস্থান অষ্টম। ম্যাচ হারলেও নয় ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বার্সার ঠিক ওপরে বেটিস। আর ৮ ম্যাচ থেকে ১৭ পয়েন্ট সংগ্রহ রিয়াল মাদ্রিদ রয়েছে সবার ওপরে।