 
     এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জামালপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন শেরপুরের কন্যা মাইমুনা খাতুন। তবে অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা ক্ষুদ্র জুতা ব্যবসায়ী মর্তুজ আলী। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ও দারিদ্রতার কারণে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে জোগাবেন সেই চিন্তায় দিন পার করছেন মেধাবী ওই ছাত্রীর পরিবার।
এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জামালপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন শেরপুরের কন্যা মাইমুনা খাতুন। তবে অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা ক্ষুদ্র জুতা ব্যবসায়ী মর্তুজ আলী। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা ও দারিদ্রতার কারণে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে জোগাবেন সেই চিন্তায় দিন পার করছেন মেধাবী ওই ছাত্রীর পরিবার।
গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মাইমুনা খাতুনের মেধাক্রম ৪৬০১তম। তার মেরিট স্কোর ১৭৪.২৫, তিনি ময়মনসিংহের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ২০২৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।
নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজার এলাকায় ক্ষুদ্র জুতা দোকানদার মর্তুজ আলী ও গৃহিণী নাসরিন আক্তারের দুই কন্যা। এর মধ্যে প্রথম কন্যা মাইমুনা খাতুন।
মাইমুনার শিক্ষাজীবনে সূচনা হয়েছিল চন্দ্রকোনা বাজারের আঞ্জুমান একাডেমি থেকে, যেখানে তিনি ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তার পরবর্তী পথচলা ছিল একইভাবে সফল। নকলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি ২০২০ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায়ও একই স্কুল থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।
মাইমুনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার লক্ষ্য সমাজের অসহায়, দুঃস্থ ও অবহেলিত মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। তিনি আরও বলেন, এখন আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। ‘জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। তবে চিন্তাও হচ্ছে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো কিনা। শুধু বাবার আয়ের ওপর নির্ভর করে আমার সবকিছু চলছে সামনে অনেক খরচ এগুলো নিয়ে টেনশন হয়।
ময়মনসিংহ শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ কাজী মো. হাদিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কলেজের সদ্য প্রাক্তন ছাত্রী মাইমুনা খাতুন অত্যন্ত মেধাবী। তার পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অবদান অত্যন্ত উজ্জ্বল। মাইমুনার বাবা একজন ক্ষুদ্র জুতা ব্যবসায়ী। আমার জানামতে তাদের ভিটেবাড়ি ছাড়া তেমন কোনো জায়গা-জমিও নাই। তবে তার দুই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. উমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাইমুনা খুবই মেধাবী ছাত্রী। সে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আমাদের স্কুলের ছাত্রী হওয়ায় সত্যিই গর্বিত। ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মজীবনে ভালো করলে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম হয়, তেমনি শিক্ষকদেরও সুনাম হয়। মাইমুনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
তিনি বলেন, মাইমুনার পরিবার তেমন সচ্ছল না, আমরা স্কুল থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র জুতা ব্যবসায়ী। নকলা উপজেলা থেকে জুতা কিনে চন্দ্রকোণায় গিয়ে বিক্রি করেন। এই উপার্জন দিয়ে সংসার চালিয়ে মেডিকেলে পড়ার খরচ চালানো তার বাবার জন্য কঠিন। তাই সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ রইল।
মাইমুনার পরিবারের ভূমিকা তার সাফল্যের পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার বাবা মর্তুজ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যেন ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমি আমাদের ইউনিয়নের বাজারে ছোট্ট একটি দোকানে জুতার ব্যাবসা করি। এতে আমার কোনোমতে সংসার চলে। আমার দুইটা মেয়ে মেধাবী হওয়ায় লেখাপড়া করাতে কখনো কার্পণ্য করি না। আমার প্রথম কন্যা মাইমুনা এ বছর জামালপুর মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে দুশ্চিন্তায় আছি, তার লেখাপড়ার খরচ কীভাবে যোগাবো সেটি নিয়ে। আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ, গ্রামে ভিটামাটি ছাড়া দুই কাঠা ধানের জমি আছে। উপজেলা নকলা বাজার থেকে জুতা কিনে চন্দ্রকোনা বাজারে বিক্রি করে যতটুকু লাভ করি তাতে পোষায় না, তাই বাকিটা ধারদেনা করে সংসার চলে। এখনো অনেক ধারদেনা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ মেয়ের মেডিকেলে ভর্তি, কেমনে কী করবো বুঝতে পারছি না।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com