#

ভোলার তজুমদ্দিনে চরাঞ্চলে বনবিভাগের সৃজন করা ম্যানগ্রোভ বনের কেওড়া বাগান মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এতে প্রতি বছর করালগ্রাসী মেঘনার ভাঙনে হাজার হাজার কেওড়া কাঠ গাছ নদীর গর্ভে বিলীন হলেও তা কেটে সংরক্ষণের বিধান না থাকায় সংরক্ষণে করতে পারছেন না বনবিভাগ। ভাঙনের কবল থেকে বনাঞ্চল রক্ষা করতে না পারলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করছে উপজেলায় বসবাসরতরা।

বনবিভাগের তথ্য মতে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে মেঘনার বুকে জেগে উঠা বিভিন্ন চর সমূহে ম্যানগ্রোভ বনায়ণ করান বনবিভাগের মাধ্যমে সরকার। অথচয় সরকারী অর্থায়নে করা এসব ম্যানগ্রোভ বন মেঘনার ভাঙ্গনে প্রতিদিন শত শত গাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিলীন হওয়া এসব সরকারী সম্পদ কেটে সংরক্ষণ করার আইন না থাকায় তা সংরক্ষণ করতে পারছেনা বনবিভাগ। প্রতি বছর নতুন বাগান সৃজন করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেঘনার ভাঙনে বাগানের আয়তন প্রতি বছরই কমছে। ভাঙনের কবল থেকে বনাঞ্চল রক্ষা করতে না পারলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করছে সচেতন মহল। ফলে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের। একটি রাষ্ট্রের মোট আয়াতনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার নিয়ম থকেলেও বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ৮ থেকে ৯ শতাংশ। যে কারণে দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতি বছর মেঘনার ভাঙনে শত শত কেওড়াকাঠ গাছ নদীর গর্ভের বিলীন হয়ে গেলেও বনবিভাগের লোকজনকে তা সংরক্ষণ করতে দেখা যায় না। নদীর ভাঙন থেকে বাগানগুলি রক্ষা করতে না পারলে হয়ত কয়েক বছরের মধ্যে পুরো বাগান নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যেতে পারে আর তাতে করে প্রাকৃতিক বন্যায় প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি হবে আমাদের। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে বসতি এলাকায় সরাসরি আঘাত হানায় অনেক গাছপালা ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

স্থানীয় খোকন পাটওয়ারী বলেন, মেঘনার ভাঙনে প্রতি বছর ম্যানগ্রোভ বন বিলীন হচ্ছে। তা ঠেকানো না গেলে প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণ হানির আশংকা রয়েছে। তাই মেঘনার ভাঙন থেকে বন রক্ষা করতে সরকারকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তজুমদ্দিন হোসনেয়ারা চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন সুমন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মেঘনার ভাঙনে ম্যানগ্রোভ বনের গাছগুলি বিলিন হচ্ছে। এসবের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসহ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তাই বনকে নদীর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা না গেলে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ পড়বে ধ্বংসের মুখে। বেশি বেশি করে নতুন বাগান সৃষ্টি করতে হবে নিতে হবে ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা। এতেই আমরা বড় দূর্যোগ ঠেকাতে না পারলেও ছোটগুলি ঠেকাতে সক্ষম হবো। আইন প্রনয়ন করে গাছগুলি সংরক্ষণেরও দাবী জানান তিনি।

দৌলতখান রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম বলেন, নদীতে বিলিন হওয়া গাছ কাটতে আইনে নিষেধ আছে তাই নদীতে বিলীন হওয়া গাছগুলি কেটে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ভাঙন কবলিত এলাকার গাছ কাটলে নদীর ভাঙন তীব্র হয় যে কারণে এসব গাছগুলি কাটতে নিষেধ রয়েছে। তবুও ভাঙন কবলিত বাগান কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন