ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের রক্তে মিশে আছে ফুটবল। প্রকৃতিগতভাবেই তারা দারুণ ফুটবল দক্ষতার অধিকারী। কিন্তু কে গোলবারের নিচে দাঁড়াবেন, কে গোল দেবেন আর প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় আটকানোর দায়িত্ব কাদের থাকবে তা নিশ্চয় প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয় না। কেউ ফরোয়ার্ড থেকে গোলরক্ষক বনে যান আবার কেউ বনে যান ডিফেন্ডার।
মিরান্ডাও হয়তো রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব নিতে চাননি। বিশেষ করে রোগা পটকা একটা ছেলে ছিলেন তিনি। রক্ষণ সামলাতে পরিশ্রম করতে হয়! পাশাপাশি শক্তিরও দরকার আছে; কিন্তু মিরান্ডাকে ডিফেন্ডার হতে হলো। নিয়তি তাকে ওই জায়গাটাই পাকা করে দিয়েছেন। কারণ তিনি সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন তার ভাইকে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপ দলে রক্ষণের অন্যতম ভরসা ৩৩ বছরের এই মিরান্ডা। তবে সব ম্যাচে তাকে খেলানোর নিশ্চয়তা কোচ দিতে পারবেন না। কারণ থিয়াগো সিলভা এবং মারকুইনোস আছেন দলে সুযোগ নিতে। যদিও ক্লাবের হয়ে তিনি অন্যতম ভরসা। তবে মিরান্ডার ডিফেন্ডার হওয়া তার ডিফেন্ডার ভাইকে সম্মান জানাতে।
মিরান্ডার গল্পের শুরুটা বলা যাক। তার পুরোনাম জোয়াও মিরান্ডা ডে সৌজা ফিলহো। তিনি পরিবারের ১২ ভাইবোনের মধ্যে ষষ্ঠতম। তার বড় ভাই ভিসেন্তে দুর্দান্ত ডিফেন্ডার ছিলেন। খেলতেন পারানাভাইয়ে। কিন্তু আর দশটা ব্রাজিলিয়ান পরিবারের মতো অভাবের সংসার তাদের। তাই খেলার পাশাপাশি ভিসেন্তেকে নেমে পড়তে হয় কাজে।
মিরান্ডার ভাই শুরু করেন ইলেকট্রিক কোম্পানিতে টেকনিসিয়ানের কাজ। কিন্তু তার ভাইয়ের খেলোয়াড় কিংবা টেকনিসিয়ান কোনটাই হওয়া হলো না। দুর্ঘটনায় পৃথিবী ছাড়লেন ভিসেন্তে। ভাইয়ের এমন মৃত্যু দারুণ প্রভাব ফেলেছিল মিরান্ডার জীবনে। মিরান্ডা সিদ্ধান্তটা তখনই নেন। তিনি গোল করবেন না গোলদাতাদের আটকাবেন। হবেন ডিফেন্ডার। ভাইয়ের মতো ডিফেন্ডার।
মিরান্ডার বাধা ছিল তার রোগা শরীর। কিন্তু তিনি তা উৎরে গেলেন। ফ্রান্সের ক্লাব সোশ্যাক্সে খেলার জন্য ডাকও পেলেন। কিন্তু সে সময়েই মারা গেলেন বাবা। মা ছোট ছেলেকে বিদেশ বিভূইয়ে যেতে না করলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা মিরান্ডা চলে গেলেন ফ্রান্সে। তবে পরান পুড়তে লাগলো তার। মন টিকল না। খেলায়ও তার প্রভার পড়লো। দেশে ফিরলেন। ফ্রান্সে দেড় বছরের বেশি থাকতে পারলেন না। দেশে এসে যোগ দিলেন সাও পাওলোতে।
মিরান্ডা আবিস্কৃত হলেন তখনই। চোট পাওয়া লুসিওর জায়গায় ব্রাজিল দলে ডাক পেলেন। ব্রাজিল অভিষেক হলো ২০০৯ সালে। কিন্তু ২০১০ কিংবা ২০১৪ সালে ব্রাজিল দলে সুযোগ মেলিনি। ২০১১ সালে অবশ্য অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।
কিন্তু থিয়াগো সিলভা, ডেভিড লুইস, দান্তেদের হটিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি তিনি। তাই ৩৩ বছর বয়সে এসে জীবনের প্রথম বিশ্বকাপের দারপ্রান্তে তিনি। কোচ তিতে রাশিয়া বিশ্বকাপে তার ওপর ভরসা রেখেছেন। মিরান্ডা এতেই দারুণ খুশি হয়েছেন। এখন তার চাওয়া ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে অন্তত একটি ম্যাচে মাঠে নামা। যে ভাইয়ের সম্মানে তিনি ডিফেন্ডার হয়েছেন সেটা পূর্ণ করা।