হায় জীবন! অনাদরে, অবহেলায় সবুজ-সতেজ জীবন শুকিয়ে যায়। একটা সময় কত লোকজনের সঙ্গে জমিয়ে দিন কেটেছে তার। ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশান, দিনরাত শুটিংয়ে মেতে থেকেছেন দিনের পর দিন। অভিনেত্রী বলেই হয়তো অনেক আত্মীয় স্বজনের কাছে বাড়তি আগ্রহের প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি। সেই তাজিন আহমেদকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো কোনো প্রিয়জনের মুখ না দেখেই!
আজ মঙ্গলবার (২২ মে) দুপুর ১২টায় তাজিন আহমেদের হার্ট অ্যাটাক হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এক সহকমী মিহির।পরে তাদের সাথে ছিলেন হোমায়ুরা হিমু ও উজ্জল সৈয়দ । উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। এরপর বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে মারা যান এই অভিনেত্রী।
তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। মৃত্যুর খবর জানানোর পাশাপাশি খুব দুঃখ করে নাসিম জানালেন, ‘খারাপ লাগলো এই ভেবে যে মৃত্যুর সময় তাজিনের পরিবারের কেউ ছিলেন না পাশে। এখন পর্যন্ত তাজিনের পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি। হাসপাতালে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখা হবে। ইফতারের পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিব কখন, কোথায় জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।’
এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ হঠাৎ করেই অভিনয় থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। গত বছর ববি হাজ্জাজের নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে’ (এনডিএম) যোগ দিয়েছিলেন তাজিন আহমেদ। পেয়েছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সম্পাদক (সাংস্কৃতিক) পদ।
তার কর্মজীবন সম্পর্কে সবার কমবেশি জানা আছে। কিন্তু পরিবার পরিজন কোথায় তার? খোঁজ নিয়ে খুব বেশি তথ্য উদ্ধার করা গেল না। জানা গেল, তাজিন আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি নোয়াখালী। তবে ছোটবেলায় বাবাকে হারানোয় পাবনায় নানা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন তিনি। এরপর কৈশোরে চলে আসেন ঢাকায়। মায়ের পৈতৃক বাড়ি ছিল আদাবরে। সেখানেই মানুষ হতে থাকেন।
পড়ালেখা শেষে শখের বশে শুরু করেন অভিনয়। করেছেন সাংবাদিকতাও। নাটক লিখেছেন টেলিভিশনে। উপস্থাপনাও করেছেন তিনি। একটা সময় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে যোগ দিয়েছেন মঞ্চ নাটকে।
দাম্পত্য জীবনেও খুব একটা সুখী হতে পারেননি তাজিন। প্রথম জীবনে তাজিন আহমেদ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন নাট্য নির্মাতা এজাজ মুন্নাকে। খুব বেশিদিন টেকেনি সেই সংসার। এরপর তিনি বিয়ে করেন একজন মিউজিশিয়ানকে। এই সংসারেও হয়তো ঝামেলা ছিল। জীবন প্রদীপ নিভে যাবার আগে দ্বিতীয় স্বামীকেও পাশে পেলেন না তাজিন।
শেষ জীবনে পরিবার-পরিজন থেকে নিজেকে আড়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাজিন আহমেদ। প্রিয় আঙিনা অভিনয়ের সঙ্গেও ছিল দূরত্ব। অল্প কিছু প্রিয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও সেটা মুঠোফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল। বেশ নিরবে নিভৃতেই কাটতো কেটেছে তার শেষ দিনগুলো। সেগুলো যে বিষাদময়, যাতনাময় ছিল তার প্রমাণ মেলে তাজিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো।
এই তো ফুুরিয়ে গেল মানবজনম! আর কোনো অনুভূতি জ্বলবে না, জ্বালাবে না! কাউকে প্রয়োজনও পড়বে না আর।